‘কষ্ট করি আমরা, সময়মত ফল পাই না’

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। আবারও নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছি। কষ্ট করে চাষ করি আমরা, কিন্তু ভাল কোন ফলাফল পাই না। সরকারি অনেক সহযোগিতা আসে। কিন্তু তা আমাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছায় না। যার কারণে আমরা সারাজীবন কষ্ট করে যাই, কিন্তু সময়মত ভাল ফলাফল আসে না। এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার আদিখালী গ্রামের কৃষক মো. মাসুম গাজী।
মাসুম গাজী আরও বলেন, ‘ধান রোপণের সময় কৃষি অফিসাররা বলেছিলেন কৃষি কার্ড কর। ধান বিক্রি করার সময় এক হাজার টাকা করে রেট পাবা। কিন্তু সরকার যখন ধান কেনা শুরু করে তখন আর আমরা ধান বেচতে পারি না। কারণ আমাদের ধান কাটা ও বিক্রি শেষ হওয়ার পর সরকার ধান ক্রয় শুরু করে। কষ্ট করতে করতে কৃষক মরছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন নেই’। শুধু মাসুম গাজী নন, বাগেরহাটের বেশিরভাগ কৃষকের একই অবস্থা। করোনার কারণে সময়মত সবজির বীজ রোপণ করতে না পেরে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে চাষাবাদ শুরু করেছেন দরিদ্র চাষিরা। তবে ভাল ফলন ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সার্বিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর, উমাজুড়ি ও আদিখালী গ্রামের কৃষক আকবর আলী, বেলাল হোসেন, মর্জিনাসহ সবজি চাষিরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। বর্তমানে সবজি বীজ, সার, কীটনাশক, জ্বালানি তেল, বাঁশ ও সুতার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত ফসল তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হয়। এই অবস্থায় বিনা সুদে ঋণ ও সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা আরও বলেন, সবজি উৎপাদনের পর বিক্রি করার েেত্র সরাসরি মোকামে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে নায্যমূল্য পাব। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
বাগেরহাট জেলায় ২ ল ৪৪ হাজার কৃষক রয়েছেন। প্রত্য ও পরোভাবে এই জেলার দশ লাধিক মানুষ কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার চাষি রয়েছেন যারা সবজি চাষ করেন। জেলার বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, কচুয়া, মোলাহাট, ফকিরহাট উপজেলায় সব থেকে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। জেলায় প্রতিবছর প্রায় দেড় ল মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হয়। চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন,‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘেরের আইলে সবজির জন্য মাচা দেওয়ার বাঁশ আসতে বিলম্ব হয়েছে। ফলে চাষিদের সবজি চাষ শুরু করতে ৮০ শতাংশ কৃষক তাদের জমিতে চাষ শুরু করেছেন। আমরা কৃষকদের সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ করছি। তাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি’।বাগেরহাট জেলা কৃষি ঋণ বিতরণ ও আদায় মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং বাগেরহাট অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক দেপাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদোনার জন্য আমাদের ১৪টি শাখায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। ১০ টাকা দিয়ে একটি হিসাব খুলে ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা ঋণ নিতে পারবেন। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার চাষিকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকার বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬৫ টি ইউনিয়নে ৩২টি করে আদর্শ সবজি পুষ্টি বাগান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। কৃষকরা সহজ শর্তে ঋণ পাবেন। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য নিশ্চিতে কাজ করছি আমরা। বাগেরহাট জেলায় ৬ হাজার ২ শ ৭৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের ল্যমাত্রা রয়েছে।