বিশ্বের যত দামি চাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥চাল বিশ্বের জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি। বিশ্বজুড়ে ৩৫০ কোটির বেশি মানুষের নিত্যদিনের আহার এটি। শর্করা ও ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস চাল থেকে তৈরি ভাত ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য। প্রচলিত সিদ্ধ চালের পাশাপাশি অনেক ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ চাল রয়েছে। কিছু চাল রয়েছে যেগুলোর দাম আকাশচুম্বী। বিশেষ উৎপাদন পদ্ধতি, স্বাদের অনন্যতা কয়েকটি জাতের চালের দামকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনই কিছু দামি চাল নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ শেষ পর্ব—
বাসমতী চালের সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। সরু-লম্বা দানা ও সুগন্ধের কারণে শুধু আমাদের দেশেই নয়, ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত দোকানগুলোতে বাসমতী সগৌরবে জায়গা করে নিয়েছে। পুষ্টি বিচারে অন্যান্য চালের তুলনায় অনেক এগিয়ে বাসমতী। চালটি তৈরিতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এসব কারণে বিশ্বের নামি-দামি চালের তালিকায় বাসমতী অন্যতম শীর্ষস্থানীয়।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ বাসমতী চাল উৎপাদনকারী দেশ। গোটা বিশ্বের মোট উৎপাদনের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাসমতী উৎপাদিত হয় ভারতে। দেশটি কয়েক ধরনের বাসমতী চাল পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের বাসমতী প্রিমিয়াম ধাঁচের নয় ও সবগুলো দামিও নয়। হিমালয় পর্বতের পাদদেশ বাসমতী চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে জমি সেচের ব্যবস্থা করা হয়। জল ও মাটির তাপমাত্রা বাসমতী ধানকে তার অনন্য দানা ও সুগন্ধি দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ বাসমতী ধান উৎপাদনে বিখ্যাত। তবে দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারেও প্রচুর বাসমতী ধান চাষ হয়। ভারতের বাইরে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও নেপালে বাসমতী চাল উৎপাদিত হয়। ভারতে যেহেতু সবচেয়ে বেশি বাসমতী উৎপাদন হয়, স্বাভাবিকভাবে রফতানিতেও দেশটি শীর্ষে। ফলে বিশ্বদরবারে ভারতে উৎপাদিত বাসমতীর আলাদা কদর রয়েছে।ভারতের বাজারে প্রতি কেজি বাসমতী চাল কিনতে আপনাকে ২০০ রুপির বেশি গুনতে হবে। আর ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বিশেষ এ চালটির দাম আরো বেশি।
কতগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য বাসমতী চালকে সবার থেকে মূল্যবান করে তুলেছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে চালের আকার। অন্যান্য চালের তুলনায় এটা অনেক বেশি লম্বা ও সরু। রান্নার আগে প্রতিটি বাসমতী চালের দৈর্ঘ্য হয় কমপক্ষে ৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং রান্নার পর তা বেড়ে ২ সেন্টিমিটার বা তার বেশি হয়ে যায়।
এছাড়া চালটি উৎপাদনে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়া হয়, যা বেশ জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। বাসমতী তৈরির ধান সব সময় পুরনো হতে হয়। ফলে বাছাইকৃত ধান ক্রয়ের পর এটাকে কমপক্ষে ১৮ মাস থেকে সর্বাধিক ২৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়।
ধান বাছাই থেকে শুরু করে গুদামজাত সবগুলো ধাপেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয় এবং প্রক্রিয়াকরণের সব শর্ত যথাযথভাবে মেনে কাজ সম্পাদন করতে হয়। এ বিশেষ উৎপাদন প্রক্রিয়া চালকে তুলতুলে নরম হতে সাহায্য করে এবং এ সময়ের মধ্যে চালে ২-অ্যাসিটেল-১-পাইরোলিন নামের একটি রাসায়নিক উপাদান যুক্ত হওয়ায় চালটি থেকে অনন্য সুগন্ধ ছড়ায়। উপাদানটি যত বেশি পরিমাণে যুক্ত হয়, চালটি তত বেশি সুগন্ধ ছড়ায়।অন্যদিকে প্রক্রিয়াকরণের সামান্য ভুলে চালটি স্বাদ ও গাঠনিক পুষ্টি হারাতে পারে। তাই উন্নত মানের বাসমতী তৈরিতে ধান সংগ্রহ থেকে শুরু করে পিষে চাল বের করা পর্যন্ত উৎপাদনকারীরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেন। দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল উৎপাদন পদ্ধতি চালটিকে আরো বেশি ব্যয়বহুল করে তুলেছে।
আমিরা নেচার ফুডস লিমিটেড বিশ্বের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় বাসমতী চাল উৎপাদনকারী কোম্পানি। শীর্ষ মানের বাসমতী চাল উৎপাদনের জন্য কোম্পানিটি বিশ্ববিখ্যাত। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানিটি সাধারণত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে পণ্যটি সরবরাহ করে থাকে।
আকার-আকৃতি ও উৎপাদন পদ্ধতির বাইরে গুণগত মানেও বাসমতী সেরা। চালটিতে গ্লাইসেমিক সূচক অনেক কম থাকে। সহজ কথায় বাসমতীতে চিনির পরিমাণ অন্য চালের তুলনায় অনেক কম। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে বাসমতী খাওয়া নিরাপদ, যদিও সীমিত পরিমাণে। বাসমতী চালে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। সাদা বাসমতী ভাতে সঠিক মাত্রায় ফাইবার থাকে। এটি হজমে সহায়তা করে ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। বাসমতী চালের ভাত আঠালো বা চটচটে নয়। ফলে চালটি রান্নার ক্ষেত্রে ফ্যাট বা চর্বি লাগে তুলনামূলক কম।