১৭ এমপি, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ আক্রান্ত দুই শতাধিক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্তত ৩০০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন এমপি রয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন শতাধিক। এছাড়া সংসদে দায়িত্ব পালন করেন এমন পুলিশ ও আনসার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় নমুনা পরীক্ষাও বাড়ানো হয়েছে । চলতি বাজেট অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন এমন সব এমপিকে পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ এমপি করোনা টেস্ট করিয়েছেন। আরো বেশ কয়েক এমপি টেস্টের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন।
শিগগিরই তাদের করোনা টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। সর্বশেষ তিন দিনে ৯১ জন এমপি সংসদ সচিবালয়ের মেডিকেল সেন্টারে করোনা টেস্ট করিয়েছেন। প্রথম দু’দিনে ৬৫ জন এমপি নমুনা দিলেও তাদের কারও মধ্যে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়নি। তবে সর্বশেষ দিনে অর্থাৎ ২২শে জুন ২৬ জন এমপি একসঙ্গে নমুনা দেন। এদের মধ্যে করোনা টেস্টের পর পজিটিভ ফলাফল পেয়েছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে নির্বাচিত এমপি এনামুল হক। তিনি বর্তমানে রাজধানীর আদাবরের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সরকারদলীয় চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আমরা সব এমপিকে এসএমএস ও ফোন করে করোনা টেস্টের জন্য অনুরোধ জানাই। প্রথমদিকে এমপিদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও এখন তাদের আগ্রহ বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এমপি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন করোনা টেস্টের জন্য। এটা নিঃসন্দেহে ভালো দিক বলে মনে করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ এমপি করোনা টেস্ট করিয়েছেন সংসদ সচিবালয় থেকে। এর বাইরেও অনেক এমপি নিজের নির্বাচনী এলাকা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে করোনা টেস্ট করিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। চিফ হুইপ জানান, দেশে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এমপিদের মধ্যে আতঙ্ক ও সচেতনতা দুটোই বেড়েছে। জনসম্পৃক্ততা থাকায় এমপিরা এমনিতেই সব সময় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, গত ২০শে জুন থেকে এমপিদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। সংসদ এলাকায় পার্লামেন্ট মেম্বারর্স ক্লাবের এলডি হলের দোতলায় আইইডিসিআর এর প্রতিনিধিরা এসে এমপিদের নমুনা নিয়ে যান। এরপর নমুনা পরীক্ষা করিয়ে পরদিন সন্ধ্যার মধ্যে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়। প্রথমদিন শনিবার ২০ জন এমপি নমুনা দেন তাদের মধ্যে কারোরই করোনা শনাক্ত হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দিন ২১শে জুন আরো ৪৫ জন নমুনা দেন তাদের ফলাফলেও করোনা শনাক্ত হয়নি। ২২শে জুন ২৬ জন সংসদ সদস্য নমুনা দেন। তাদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ আসে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে,
এ পর্যন্ত ১৭ জন মন্ত্রী-এমপি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সংসদ মেডিকেলে নমুনা পরীক্ষায় চলতি মাসে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পজিটিভ এসেছে। আর সংসদ ভবনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে আছেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রধান হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ, সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, রেল মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, মোসলেম উদ্দিন, ফরিদুল হক খান দুলাল, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, মোকাব্বির খান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। করোনা সংক্রমণের মধ্যে কঠোর সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ১০ই জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর পর ৫ কার্যদিবস চলেছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ১৫ই জুন সম্পূরক বাজেট পাসের পর অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরপর ২৩শে জুন সংসদের মুলতবি অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে এমপিদের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন আরো সংক্ষিপ্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামী ২৯ ও ৩০শে জুন দুই কার্যদিবস সংসদ অধিবেশন চলবে। এরপর অধিবেশন মুলতবি করা হবে। এবার বাজেট অধিবেশনে নির্দিষ্ট সংসদ সদস্য নির্ধারিত দিনেই কেবল অধিবেশনে যোগদান করতে পারছেন। সেক্ষত্রে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকছেন। কারণ এবার করোনা ভাইরাসের কারণে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হয়েছে। তাই কোনো সদস্য একদিন যোগদান করলে আবার কয়েকদিন পর তার সিডিউল পড়ছে। আবার কারো মাত্র একদিন যোগদানের জন্য তালিকা করা হয়েছে। চিফ হুইপের দপ্তর থেকে নির্দিষ্ট সংসদ সদস্যদের তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যার যেদিন দরকার সে শুধুমাত্র ওইদিন এসে তার নির্ধারিত বক্তব্য দিচ্ছেন। তাছাড়া বয়স্ক সংসদ সদস্যদের সংসদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।