জীবাণুমুক্ত মেশিন আবিষ্কার করলেন যশোর সেনানিবাসের সেনা কর্মকর্তা

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ যেখানে খুশি রাখা যাবে, প্রয়োজনে বহন করা যাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও চলবে চার ঘন্টা। বাসা-বাড়ি এমনকি অফিস-আদালতে প্রবেশ ও প্রস্থানে শরীর জীবাণুমুক্ত করা যাবে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এমনই এক মেশিন আবিষ্কার করেছেন যশোর সেনানিবাসের সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. তানজিমুল আনোয়ার। তাকে সহযোগিতা করেছেন করোনা নিয়ে ঝিনাইদহ অঞ্চলে তার নেতৃত্বে কাজ করা সেনা সদস্যরা। মেশিনটির নাম দেওয়া হয়েছে পোর্টেবল ডিজইনফ্যাক্টর সিস্টেম ভার্সন থ্রি (পিডিএস-ভি-৩)। ইতোমধ্যে ১০০টি এই মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের অস্থায়ী ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তারা। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করা সেনা সদস্যদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশে^র প্রায় ২১০টি দেশ আজ করোনা ভাইরাসের কবলে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় কারো সামনে আসছে না। বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কারে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত যে ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে তা সবই পরীক্ষামূলক পর্যায় রয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের নিরাপদ থাকার বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে মানবজাতি।
এই চিন্তা থেকেই যশোর সেনানিবাসের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. তানজিমুল আনোয়ার অন্য সেনা সদস্যদের নিয়ে কাজ শুরু করেন, আবিষ্কার করেন পিডিএস ভি-৩ মেশিন। সেনা সদস্যরা জানান, এই মেশিন খুব সহজ পদ্ধতির একটি জীবাণুনাশক মেশিন। এটা তৈরি করতে অল্প পয়সা ব্যয় হবে। এটি তৈরিতে একটি লোহার রড, একটি ছোট পানির পাম্প, একটি ব্যাটারিসহ সামান্য কিছু ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। মেশিনটি চারপাশের ৫ ফুট জায়গায় স্প্রে করতে পারবে। এটি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় কেউ এর সামনে দিয়ে প্রবেশ করা মাত্রই মেশিনটি তার নিজ গতিতে কাজ শুরু করবে। আবার প্রস্থানের পর অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। মেশিনটির সঙ্গে একটি পানির জার থাকবে, যেখানে থাকবে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি। এই পানি প্রয়োজন মতো মানুষের শরীরে স্প্রে করবে। যারা এটি ব্যবহার করবেন তারা প্রয়োজনে এক স্থানে দাঁড়িয়ে চারদিকে ঘুরে ভালোভাবে স্প্রে সম্পন্ন করে নিতে পারবেন। এই মেশিনটি সহজে বহন করা যাবে। যে কারণে যেখানে খুশি সেখানে বসানো সম্ভব। বাড়ির গেটে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুখে, অফিস-আদালতের প্রধান ফটকে এটা বসিয়ে নিলে ওই সব স্থানে যারাই প্রবেশ করবেন তারা জীবাণুমুক্ত হতে পারবেন। তবে ব্যবহারের সময় অবশ্যই চোখ ও মুখ বন্ধ রাখতে হবে। সেনা সদস্যরা আরও জানান, ২০ দিনের প্রচেষ্টায় তারা এটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথমে দুই দফা প্রচেষ্টা তেমন সফলতা না আসলেও তৃতীয় দফায় সফল হয়েছেন। যে কারণে মেশিনটির নামের সঙ্গে ভার্সন থ্রি যুক্ত করেছেন। এই মেশিনটি ইতোমধ্যে যশোর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলে কাজ শুরু করেছে। তারা আশা করছেন এটি দেশের সব এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।