যশোর পৌরসভার ৯ জনসহ একদিনে আক্রান্ত ৩০, উপসর্গে মৃত আরও ১ জন

0

বিএম আসাদ ॥ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মক রূপ নিয়েছে যশোর জেলায়। গতকাল একদিনে চিকিৎসক ও পুলিশসহ ৩০ জন করোনায় (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। যশোর পৌর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯ জন। এ নিয়ে যশোর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩শ’ ১৪ জন।
এদিকে, করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দিনগত রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৪টা ১০ মিনিটে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। আজিজুল ইসলামের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামে। তিনি চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শামীম কবিরের পিতা। গতকাল দুপুরে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল যশোর জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে যশোর সদরে ১১ জন, অভয়নগরে ১৫ জন এবং কেশবপুরে ৪ জন রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোক রয়েছে আক্রান্তের তালিকায়। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ভেতর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা ৪২ বছর বয়স্ক ডা. বিনয় কৃষ্ণ সাহা নামে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। অন্যরা হলেন- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের রফিকুল ইসলাম (৩৮), ব্যাংক এশিয়া যশোর শাখার রবিউল ইসলাম (৩৫), ফতেপুরের মোহাম্মদ আলী (৩৩), র‌্যাব-৬ এর সদস্য আজিজুল হক (৩০), শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার ৫৮ বছর বয়স্ক এক ব্যবসায়ী কাজীপাড়ার বাসিন্দা রেনেটা ফার্মার ৩১ বছর বয়স্ক কর্মকর্তা, শহরের চুড়িপট্টি হাজী আব্দুল করিম রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়স্ক মোশারফ হোসেন, ডিসি বাংলো রোডের ৪৮ বছর বয়স্ক এক গৃহিনী, আরবপুরের আশিকুর রহমান চাকলাদার (৩০), তার স্ত্রী মারিয়া মেহজাবিন (২৪), মনিরামপুরের কৃষি কর্মকর্তা, কেশবপুর উপজলোর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ (৩১), তার স্ত্রী মিথি তরফদার (২৪), নোনদ ২১ বছরের কলেজছাত্রী, কেশবপুর থানা পুলিশের সদস্য, সাতক্ষীরার কলারোয়ার মো. আলমগীর হোসেন (৩০), অভয়নগরের গুয়াখোলা গ্রামের ৪৬ বছর বয়স্ক এক গৃহিনী, নওয়াপাড়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার শামসুদ্দিন আহমেদ (৪১), শংকরপাশা গ্রামের হাফিজুর রহমানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার (৪৫), দু’কন্যা ২৫ বছর ও ২০ বছর বয়স্কা কলেজছাত্রী, বুইকারা গ্রামের ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান (৫৮) তার স্ত্রী ৩৮ বছর বয়স্ক গৃহিনী, ২৩ বছর বয়স্ক পুত্র, ১০ বছর বয়স্কা দু’স্কুলছাত্রী। একই পরিবারের আক্তারুজ্জামানের ৩০ বছর বয়স্কা স্ত্রী, ১৫ ও ১৪ বছর বয়স্কা দু’কন্যা এবং আশরাফুজ্জামানের ১১ বছর বয়সের এক পুত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া নওয়াপাড়ার আনিসুর রহমান আসি (৬৫) নামে এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৭ জুন তার করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০ জুন তার করোনা পজেটিভ আসে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে ৮৬টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর ভেতর ৭৫টি ছিল নতুন রিপোর্ট। ওই ৭৫টি রিপোর্টের ভেতর ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২১টি নমুনা ছিল ফলোআপ রিপোর্ট। এতে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়সহ ৫ জন এখনো করোনা ভাইরাসে ভুগছেন বলে ধরা পড়েছেন। গতকাল ৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আক্রান্তদের ভেতর ১শ’ ২০ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। ১১ জন হাসপাতাল আইসোলেশন ও ১শ’ ৮২ জন হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে গতকাল নূর ইসলাম (৪৫) নামে এক রোগী পালিয়ে গেছে। সিটি কলেজপাড়ার আব্দুর রহমানের পুত্র নুর ইসলাম গত ১৮ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তাকে পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।