মোংলায় সরকারি খাল দখল করে বহুতল ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতা

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ মোংলা পোর্ট পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র মাদ্রাসা রোড়ের শুরুতেই সরকারি রেকর্ডিয় প্রবাহমান ঠাকুর রানী খাল। এক যুগ আগেও এ খাল দিয়ে শহর ও শহরতলীতে প্রবেশ করতো নৌকাসহ ছোট ছোট নানা ধরনের নৌযান। কিন্তু শহরকে জোয়ারের পানির প্লাবন থেকে রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক বছর আগে এ খালের গোড়ায় স্লুইস গেট নির্মাণ করেছে। এতে করে জোয়ারের পানির প্লাবনরোধ হলেও খালটি প্রবাহমান না থাকায় ইতিমধ্যে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি খালের বড় একটি অংশ নিজেদের দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছেন। এতে করে খাল সংলগ্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উৎপাতসহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। শঙ্কা দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ২০১০ সালেও এ খালটি চওড়া ছিল অন্তত ৪০ ফুট। আর এখন চওড়া সর্বোচ্চ ২০ ফুট। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে এ খালটির দু পাড়ই অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। কয়েক বছর আগে পৌরসভা জোয়ারের পানির প্লাবনরোধে খালের গোড়ায় স্লুইস গেট নির্মাণ করার ফলে খাল দিয়ে এখন আর জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। বর্তমানে খালটি খুবই সংকুচিত হয়ে অনেকটা ড্রেনে তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষার পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। অভিযোগ রয়েছে, স্লুইস গেটটি ঠিকমতো খোলা ও বন্ধ করা হয় না। এ ছাড়া খালটি ধীরে ধীরে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর নাব্যতা অনেক কমে গেছে।
এর আগে খালটি খনন করা হলেও তা পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে। এলাকাবাসী বহু আবেদন-নিবেদন করেও খালটিকে আর পুনঃখনন করাতে পারেননি। পৌরসভার স্লুইস গেট খুলে দেয়া হলেও খাল থেকে পানি নামছে না। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশ দূষণসহ মশা-মাছির উৎপাত। বর্ষার সময় পুরো এলাকায় পানি উঠে সয়লাব হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবেরও শঙ্কা রয়েছে। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, খালটির আগার দিকের অংশ বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখল করে নিয়ে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে। বহুবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ খালটিকে স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসনসহ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অবৈধ দখলদাররা তাদের দখলদারিত্ব জিইয়ে রেখেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী ও স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো. নূর আলম শেখ বলেন, খালটি প্রবাহমান না থাকায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পানিবাহিত নানা ধরনের রোগের বিস্তার ঘটছে। দখলদার ও বর্জ্য দূষণে খালটি এখন বিপর্যস্ত। স্লুইস গেটটি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে যাতে এ খালের পানি প্রবাহমান থাকে। মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইউনুস আলী জানান, এক সময় খালটিতে প্রচণ্ড ¯্রােত থাকলেও এক শ্রেণির প্রভাবশালী খালটি দখল ও বিভিন্ন লোক ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে গেছে। পরিবেশ দূষণ ও মশা মাছির উৎপাত থেকে রক্ষায় খালটি জরুরি ভিত্তিতে খনন করা দরকার। মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানান, ঠাকুররানী খালটি অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ পুনঃখননের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। এদিকে, ভূক্তভোগী এলাকাবাসী অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে খালটি দখলদারমুক্ত ও পুনঃখননের দাবি জানিয়েছেন।