করোনায় আরও ১৪ জন আক্রান্ত, যশোরকে ৩ জোনে ভাগ করা হচ্ছে

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে এ জেলায় আরও ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অধিক সংখ্যক লোক আক্রান্ত হওয়ায় অভয়নগর উপজেলার চারটি ওয়ার্ডে চলছে লকডাউন। যশোর সদরসহ জেলার আট উপজেলাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হচ্ছে। আজ অথবা কাল জেলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা. মো. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন, গতকাল সকালে ৪২টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে নমুনা পজেটিভ বা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার থেকে ২০টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ ভাগ তিনি পুরুষ। বয়স ৩০ বছর। বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামে। তিনি আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) জানিয়েছেন, আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য গত শুক্রবার কুষ্টিয়া থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ওইদিনই তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমন পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরীক্ষা শেষে যবিপ্রবি’র জেনোম সেন্টার থেকে তার নমুনা পজেটি আসে। বর্তমানে তিনি হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। এ পর্যন্ত কেশবপুরে ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খুলনা থেকে আসা ২২টি রিপোর্টের ভেতর আক্রান্তদের ভেতর তিন বছরের এক শিশুপুত্র রয়েছে এবং আক্রান্ত ওই ছেলের মায়ের বয়স ২২ বছর। তাদের প্রতিবেশি যে নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার বয়স ৪০ বছর। বুইকারা গ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। তারা স্বামী ও স্ত্রী। স্বামীর বয়স ৫০ বছর। স্ত্রীর বয়স ৪২ বছর। অনুরূপ বাঘুটিয়া গ্রামে দু’জন স্বামী ও স্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন। স্বামীর বয়স ৬৫ বছর। ৫৫ বছর স্ত্রীর বয়স। মধ্যপুরে ৪০ বছর বয়সী এক নারী এবং শরখোলা গ্রামে ৪০ বছর বয়স্ক একজন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে- আক্রান্তদের তালিকায় নওয়াপাড়া শহরে। ৫৬ বছর, নওয়াপাড়া স্টেশন বাজারের ৫০ বছর বয়স্ক ব্যক্তি এবং রাজঘাট তালতলা এলাকার ২৮ বছরের এক যুবক আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০ বছর বয়স্ক এক গেটম্যান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি ওই কর্মচারী হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়ার পিএ হিসেবে কাজ করেন। এ উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। গতকাল পর্যন্ত ৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। শার্শা উপজেলায় ২২ জন, মনিরামপুরে ১৪ জন, কেশবপুরে ১৯ জন, ঝিকরগাছায় ১২ জন, যশোর সদর উপজেলায় ২৯ জন, চৌগাছায় ১৭ জন, বাঘারপাড়ায় ৪ জন ও যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরও পরীক্ষার জন্য গতকাল যশোর সিভিল সার্জন অফিস ১শ’ ৮৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যবিপ্রবি’র ল্যাবে পাঠিয়েছে। বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার সাথে সাথে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত যশোর জেলা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, অভয়নগরে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে করোনার যাতে বিস্তার না ঘটে সে জন্য পৌরসভার ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ড ও ৩ নং চলশিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ডে ১১ জুন ও পৌরসভার ৪. ৫ ওয়ার্ডে গত ১২ জন লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, জোন ঘোষণার ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশনা দেবেন। প্রশাসন ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে যশোরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এ পরিস্থিতি রোধকল্পে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। বিধি অনুযায়ী যশোরকে করোনা জোন ঘোষণা করা হবে। রেডজোন, ইয়োলো জোন ও গ্রিণ জোনে যশোরকে ভাগ করা হবে। এ ব্যাপারে গত ১০ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন আরও বলেন, দু’একদিনের ভেতর করোনা প্রতিরোধে জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।