সারা বছর চাপে থাকবে ব্যাংক খাত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মহামারীর মন্দা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকগুলো অন্তত ৭২ হাজার কোটি টাকার জোগান দেবে। আর আগামী অর্থবছর সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে আরও প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে। প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আবার বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রেখে বিনিয়োগও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি বিষয়কে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ঋণ কম পাবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটও দেখা দিতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, সরকারকে অতিরিক্ত ঋণ দিলেও ব্যাংক খাত চাপে পড়বে না। কেননা বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এ ছাড়া সিআরআর দেড় শতাংশ কমানোতে আরও ১৮ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যা সরকারের প্রয়োজনীয় ঋণ দিতে ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সরকার তার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে ব্যাংক থেকে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার জোগান দিতে হবে। আবার সরকার যদি আরও ৮৫ হাজার কোটি টাকা নেয় তাহলে চাপ তো কিছুটা সৃষ্টি হবেই। এক্ষেত্রে সরকার বিকল্প কোনো উৎস বেছে নিতে পারত। করোনা-পরবর্তীকালে যখন আবার সব ধরনের কর্মকান্ড শুরু হবে তখন উদ্যোক্তারা ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাংকে আসবে। তখন যদি প্রয়োজনীয় তারল্য না থাকে কিছুটা সমস্যা হবেই। এমনিতেই তো ব্যাংক খাতের নানা সমস্যা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারল্য সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম খান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা এখনই বলে দেওয়া যায় যে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আগামী বছরটা মোটেই সুখকর হবে না। এর মাঝে সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা ব্যাংক খাতে এখনো কিছুটা তারল্য সমস্যা রয়েছে। ফলে সামনের বছরটা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বেশ কঠিনই হবে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এমনিতে সব খাতই সংকটে রয়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে। অনেক মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। কেউ কেউ ব্যাংক থেকে আমানতও তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে সরকার ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যা দিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটাবে। এটা তো অবশ্যই বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ যখন উদ্যোক্তারা পেতে শুরু করবেন তখন হয়তো শিল্প খাতে কিছুটা আশার সঞ্চার হতে পারে।
ঘোষিত নতুন বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। চলতি বছর ৪৭ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নিয়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি মাসে আরও অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। আর ব্যাংকের হাতে রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার তারল্য। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ হিসেবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। ব্যাংক খাতে বর্তমানে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তার তথ্যমতে, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি নগদ তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভ রয়েছে আরও ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের তারল্য সমস্যা নেই। ঋণ নিলে এ খাতের কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া সিআরআর (ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ) ছাড় দেওয়া হয়েছে এতে ১৮ হাজার কোটি টাকাসহ প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এতে প্রণোদনা ও প্রস্তাবিত বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।