শহীদ জিয়ার ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকী আজ

0

সুন্দর সাহা॥ আজ শোকাবহ ৩০ মে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশি-বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির চক্রান্তে সেনাবাহিনীর বিভ্রান্ত কিছু অফিসারের তপ্ত বুলেটে শহীদ হন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক বাহক, বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার জিয়াউর রহমান।
মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের কারণে বেদনাবিধূর এ দিবসটি যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের সন্তানরা। তাই দিবসটি পালন উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে যশোর জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকায় শোক ও শ্রদ্ধার আবহ সৃষ্টি হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীসহ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষের মাঝে।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সার্বিক অস্তিত্বের সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর জাতি যখন দিশেহারা নেতৃত্বহীন, ঠিক তখনই আশার আলোকবর্তিকা হাতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সেদিনের সাহসী সেনা মেজর জিয়াউর রহমান। নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি উপো করে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে ২৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং নিজেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। তার সে ঘোষণা ও আহ্বান জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল। হতাশা কাটিয়ে জাতি তার অনুসরণে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েছিল। পরে তিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে দুর্দান্ত সাহসী ভূমিকা রেখে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে পরিণত হন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে দেশের চরম এক কান্তিলগ্নে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি প্রবর্তন করেন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার অন্যতম বহুদলীয় গণতন্ত্র।
বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক অবদান। মানুষকে ফিরিয়ে দেন প্রাণখুলে কথা বলা ও মন খুলে সত্য লেখার স্বাধীনতা। দুর্ভিরে দেশ ও ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দুর্নাম ঘুচিয়ে তিনি বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দেন তার মিশ্র অর্থনীতি ও উদার পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বে ভূয়সী প্রশংসা পায়। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সীমান্তে চলমান নাশকতা প্রতিহত ও ধ্বংস হয়। আওয়ামী-বাকশালী সরকারের পেটোয়া বাহিনীখ্যাত রীবাহিনীর বিলুপ্তি ঘটিয়ে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জিয়া সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণেই সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল-এসব দেশে লাখ লাখ বাংলাদেশী চাকরি পান। ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে জিয়ার ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা এখনও প্রশংসিত হয় মুসলিম বিশ্বে। আঞ্চলিক রাজনীতিতেও জিয়া সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে গেছেন। সার্ক গঠনের প্রস্তাব জিয়াই প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। তার সে প্রস্তাব ও পরিকল্পনার ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে সার্ক গঠিত হয়েছে। এ কারণে তিনি সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে আছেন ইতিহাসে। তাঁর খালকাটা কর্মসূচি, গ্রাম সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন জনগণের মধ্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে অতি অল্প সময়েই তিনি জনগণের হৃদয়ের আপন মানুষে পরিণত হন। জাতি তাঁরই নেতৃত্বে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ থেকে মুক্ত হয়। জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছিল ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কাছে ১৯৮১ সালের এই দিনে তাঁকে নির্মমভাবে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াকে এভাবে নিঃশেষ করা গেলেও তাঁর আদর্শ থেকে জনগণকে দূরে রাখা যায়নি। তাঁর মৃত্যুর পরই প্রমাণ মেলে দেশের মানুষ কতটা ভালবাসেন তাঁকে। ঢাকা শহরে তাঁর নামাজে জানাজায় সেদিন কোটি মানুষের সমাগম হয়েছিলো। একটি লাশের পাশে সেদিন যেন সমগ্র বাংলাদেশ নেমে আসে। জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নিয়ে কম ষড়যন্ত্র হয়নি। যে ধারাবাহিকতা এখনও চলমান। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জনগণ বারবার এই দলকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে সে সকল চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। নতুন করে আবার দেশে-বিদেশে সেই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে আইনের মারপ্যাঁচে সে ধারা রয়েছে অব্যাহত। মামলার কুন্ডলী পাকিয়ে বিচারের নামে আইনের মারপ্যাঁচে শহীদ জিয়ার সহধর্মিণী বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করা হয়েছিল। তার অতি আদরের দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর পরও চলছে সেই ষড়যন্ত্র। এখানেই শেষ নয়, কারাগার থেকে বের হয়ে তার বাসভবন ফিরোজায় বসবাস করলেও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। সেই আইনের মারপ্যাঁচে তাকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। একইভাবে বর্তমান ডিজিটালদের ষড়যন্ত্রে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মণি তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না।
মূলত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মক্ষমতা, দক্ষতা ও সততা উজাড় করে বাংলাদেশকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখে গেছেন। জাতীয় স্বার্থে কীভাবে বলিষ্ঠ ও দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করতে হয়, তার দৃষ্টান্ত জিয়াই স্থাপন করে গেছেন। তার আদর্শ ও কর্মসূচি নির্ভর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তাঁর অবর্তমানে সে দায়িত্বই পালন করে যাচ্ছে। দেশে আজকের এই করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকালেও জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে শহীদ জিয়াকে স্মরণ করছে। পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছে। সেই সাথে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আবারও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার দৃপ্ত শপথ নেবে আজ। যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচিত হবে। দেশ হবে আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী শক্তির শৃঙ্খল মুক্ত। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের মানুষ তাবেদারদের শৃঙ্খল ছিঁড়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবে। দেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে, উন্নয়নের সোপান বেয়ে। আর জিয়ার আদর্শে জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থানে দেশ থেকে হত্যা, গুম, খুন, লুট, ধর্ষণ-গণধর্ষণের মত সব বর্বরোচিত ও নৃশংস ঘটনার অবসান ঘটবে।