ঈদে রেল হারাচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার আয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত বছরের ঈদুল ফিতরে সাড়ে ৩ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের। কিন্তু ঈদের আগে ও পরের মাত্র ৫ দিনে ম্যানুয়াল, অ্যাপস, ইন্টারনেট, স্ট্যান্ডিং, টিকিট ছাড়া সব মিলিয়ে সেবা দিয়েছে ৮ লাখের বেশি যাত্রীকে। প্রাণঘাতি করোনার প্রভাবে এবার সেই সংখ্যা শুন্য। রমজান মাসসহ ঈদকেন্দ্রিক যাত্রা থেকে রেল এবার বঞ্চিত হচ্ছে তিনশ কোটি টাকার বেশি আয় থেকে। এটি শুধু যাত্রীবাহী রেলের হিসাব। মালবহন ও অন্যান্য খাত মেলালে এই অঙ্ক ছাড়াবে চারশ কোটি টাকা।
ঈদ উপলক্ষ ছাড়াও দেশে স্বাভাবিক সময়ে চলাচলকারী ৩৫০টি যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে গড়ে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে শুধু যাত্রী বহন করে দিনে সর্বোচ্চ ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারে রেলওয়ে। কিন্তু গত প্রায় তিনমাস ধরে রেল (সীমিত আকারে পরিচালিত মালবাহী ট্রেনের আয় ছাড়া) এই আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনটি বিষয়কে যোগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত এ পরিবহন সংস্থার আয়ের হিসাব ধরা হয়। প্রথমত, যাত্রী পরিবহন। এক্ষেত্রে যদি ন্যূনতম হিসাবও ধরা হয়, তাহলে রেল দৈনিক ৩ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সর্বোচ্চ আয়ের হিসাব ধরলে মাসে শুধু যাত্রী পরিবহনের ৩৭৫ কোটি টাকা আয় হারাচ্ছে। এই হিসাবে শুধু যাত্রী পরিবহন বাবদ রেল ৯০ থেকে ৩৭৫ কোটি টাকার আয় হারাচ্ছে। মালবাহী রেল (মালামাল ও পার্সেল পরিবহন) থেকেও মাসে গড়ে ৪৫ লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়া, বিবিধ খাতে গড়ে মাসে আয় হয় ৪৮ থেকে ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের দুই ঈদে এই আয় অনেক বেশি থাকে।
রেলে খরচও বেশি। রেলে ব্যয় হয় দুই ধরনের। একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে, অন্যটি অনুন্নয়ন খাতে অর্থাৎ রেল পরিচালনায় দৈনন্দিন খরচ। উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় নতুন রেললাইন ও সেতু নির্মাণ, ইঞ্জিন-বগি ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত। অনুন্নয়ন খাতে বেশির ভাগ ব্যয় হয় রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতায়। ফলে রেলের অধিকাংশ বিষয় এখনো ভর্তুকি দিয়ে চলতে হয়। জানা গেছে, রেলের টিকিট ছাপাতেও সরকারের ভর্তুকি দিতে হয়।বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের আয়ের গড় হিসাব করতে হলে পুরো রমজান মাসকে ধরে করতে হয়। কারণ রমজানের শুরুর দিকে যাত্রী কম থাকে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এই বাড়তি সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ হয়। আবার ঈদের ফিরতি ট্রেন সার্ভিসও রয়েছে। এই সময়ে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় আমরা সর্বোচ্চ আয়ের হিসাবটাই ধরতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘রেলের পরিচালন ব্যয়ও বেশি। ফলে এই যে করোনার কারণ রেল আয় বঞ্চিত হচ্ছে বছর শেষে এটি রেলওয়ের মোট আয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা রেলের লোকসানের পরিমাণকে আরো বাড়িবে দেবে। ফলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয় ও পরিচালন ব্যয়ে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হবে।’
করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশে। তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এখনো সাধারণ ছুটি চলছে। সে হিসেবে প্রায় তিন মাস যাত্রী পরিবহন থেকে কোনো আয় হচ্ছে না রেলের। এর মধ্যে শুধু এপ্রিলেই ১৭০ কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে রেলওয়ের।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) যাত্রী, মালামালসহ রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর যাত্রী পরিবহন বাবদ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। একইভাবে মালামাল পরিবহনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থবছরে একাধিক নতুন ট্রেন চালু ও নতুন কোচ সংযোজনের কারণে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির আশায় ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু করোনায় সব হিসাব এলোমেলো করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
সামগ্রিক বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব দেশের সব সেক্টরেই পড়েছে। পরিচালনা বাবদ ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু কোনো আয় নেই। এই অবস্থায় আমরা ক্ষতি পোষাতে ও কৃষকদের উপকারে পণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষায়িত ট্রেন চালু করেছি। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় যে আয় থেকে রেল বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা তো পূরণ হচ্ছে না।’