চৌগাছায় শিশু সাকিব হত্যা মামালা : চোখ উপড়ে খুনের হুমকি আগেই দেওয়া হয়েছিল

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাকিব হত্যার এক সপ্তাহ পার হলেও এই ঘটনায় জড়িত কাউকে ধরেত পারেন পুলিশ। এতে নিহত সাকিবর স্বজনরা ােভ প্রকাশ করেছেন। গত ১০ মে রাতে সাকিবকে চোখ উপড়ে নৃশংসভাবে হত্যা কর হয়।
১১ মে সাকিবর নানি ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌগাছা থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) ইনামুল হক বলেন, অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নিহত সাকিবের মা রেকসোনা বেগম বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্বামী আলমগীর হোসেন খুন হন। এর পর থেকেই তিনি তার দুই ছেলেকে চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামে নানার বাড়িতে রাখেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। হত্যার খবর শুনে সন্তন হারানো বেদনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি পরের দিন বাড়িতে আসেন।
মামলার বাদী ফাতেমা বেগম জানান, তার নাতি সাকিবকে প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতো চাচাতো নানা ইদ্রিস আলী। কয়েক মাস আগে প্রতিবেশি জালালের ছেলে ইন্তা একিট মুরগি বিক্রি করতে বাজারে যাওয়ার সময় সাকিবকে ডেকে নেয়। ওইদিন ইদ্রিসের একটি মুরগি হারিয়ে যায়। এতে ইদ্রিস সন্দেহ করে তার হারিয়ে যাওয়া মুরগি সাকিব চুরি করেছে।’ তিনি জানান, এ ঘটনায় পাড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বিচারও হয়। বিচার চলাকালে ইদ্রিসের নাতি ছেলে নয়ন বিচারকদের সামনেই সাকিবের ওপর চড়াও হয়। সে সময় বিচারকদের কেউ কেউ
নয়নকে চড়-থাপ্পড় দেন। এই কারণে বিচারের মজিলসে ইদ্রিস আলী হুঙ্কার দেয়, ‘তোর নাতির কারণে আমার নাতি মার খেয়েছে। ওর চোখ উপড়ে খুন করে ফেলবো।’ ফাতেমা বেগম বলেন, ‘এর কয়েকদিন পরে ইদ্রিস ও তার নাতি নয়ন কয়েক দফায় আমার বাড়িতে এসে সাকিবের চোখ উপড়ে হত্যার হুমকি দেয়। এতে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে যায়।’ সাকিবের নানা খলিলুর রহমান বলেন, খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে বড় ভাই শরিফুল ছোট ভাই সাকিবকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় তার দাদার বাড়িতে চলে যায়। সাকিবের জন্য আমাদের খুব খারাপ লাগছিল। তাই কয়েকদিন পরে আমি যেয়ে সাকিবকে আবারো নিয়ে আসি। সাকিব বাড়িতে এলে ইদ্রিস আবারো চোখ উপড়ে হত্যার হুমকি দেয়।’
অভিযুক্ত ইদ্রিস আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় তার স্ত্রী আল্পনা বেগমের সঙ্গে। বাড়ির পুরুষরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরুষরা বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে তাও তিনি জানেন না। সাকিব হত্যার ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই রাতে বাড়ির সবাই ধান ঝাড়ার কাজে ব্যস্তছিল। রাতে ধান ঝেড়ে কান্ত থাকায় পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই সকালে ঘুমিয়ে ছিল।’ সেদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে; আপনারা কীভাবে ধান ঝাড়লেন?- এমন প্রশ্নে চুপ থাকেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম রবি গ্রাম্য শালিসের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই পরিবার দুটিত প্রায়ই বিবাদ লেগেই থাকে। এছাড়া ওই শালিস মুরুব্বিদর মধ্যে দুই-একজন নয়নকে চড়-থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। তবে সেই কারেণই যে সাকিবকে হত্যা করা হয়েছে, এমন কথা বলা যাবে না। কী কারণে যে মাসুম বাচ্চাটাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝতে পারছি না।’
হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, খুব দ্রুতই দোষীদের গ্রেফতার করতে সম হবে পুলিশ। চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। মামলায়
অভিযুক্তদের আটকের জোর চেষ্টা চলছে। নিহত সাকিব চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রামের মৃত আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে চৌগাছা উপজেলার স্বরূপপুর গ্রামে নানা খলিলুর রহমানের বাড়িতে থেকে স্বরূপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে। পরের দিন ১০ মে সকালে স্বরুপপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি খালে তার লাশ পড়ে ছিল। তার একটি চোখ উপড়ানো ছিল। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠান।