দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো চার্জ পরিশোধে পাবে ছাড়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা পরিস্থিতিতে বিমান পরিচালনা বন্ধ রেখেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানি। তবে ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও উড়োজাহাজ লিজের টাকা, উড়োজাহাজ মেরামত, কর্মীদের বেতন, ব্যাংক লোন, উড়োজাহাজ পার্কিংসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অ্যারোনটিক্যাল, নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এমন পরিস্থিতিতে চার্জ মওকুফসহ সরকারের সহায়তা চায় দেশি এয়ারলাইন্সগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে বিভিন্ন চার্জে ছাড় দেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, এ চারটি দেশি এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২৫ মার্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরের ৭টি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশি এয়ার লাইন্সগুলোসহ ২৮টি এয়ারলাইন্সের নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত দেশি এয়ারলাইন্সগুলো। মার্চে মাসের শেষ সপ্তাহে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু প্রস্তাব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) দিয়েছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।
সংগঠনটির প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, বেবিচকের সব ধরনের অ্যারোনটিক্যাল, নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত মওকুফ করা। ব্যাংক ঋণের কিস্তি দুই প্রান্তিকে সুদবিহীনভাবে ডেফারেড পেমেন্টের ব্যবস্থা করা। উড়োজাহাজ, ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে আরোপিত অগ্রিম কর সম্পূর্ণ মওকুফ করা। অভ্যন্তরীণ খাতের জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক, ভ্যাট রহিত করা। জানা গেছে, এয়ারলাইন্সগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ২০২১ সাল পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল চার্জ আদায় না করার সিদ্ধান্ত হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল চার্জ ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এয়ারলাইন্সগুলো থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকেও কিছু ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়কে ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ, চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে এনবিআর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর এয়ারলাইন্সগুলো চার্জে ছাড়ের সুবিধা পাবে। এ প্রসঙ্গে এওএবি মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিমান পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনও আয় নেই। তবে অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় করতে হচ্ছে আমাদের। দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখতে চার্জ মওকুফসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কাছে আমরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন না হলে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। বেবিচক সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চার্জ আদায় করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব চার্জ বাবদ প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকা আয় হয় সংস্থাটির। করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় বেবিচকের আয়ও শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো সহায়তা চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিমান মন্ত্রণালয় বৈঠক করে ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, করোনার প্রভাবে এয়ারলাইন্সগুলো আর্থিক ক্ষতির মধ্যে আছে। সিভিল এভিয়েশনেরও আয় বন্ধ। দেশি এয়ারলাইন্সের আবেদনের বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইন্স চার্জে ছাড় পাবে।