শেয়ারবাজারের টাকা নেয়ার অপেক্ষায় নকল মাস্কের জেএমআই হসপিটাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ডাক্তারদের জন্য নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭৫ কোটি টাকা নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এই টাকা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে রোড শো করেছে কোম্পানিটি।
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানিটি জমি ক্রয়, ভবন তৈরি, মেশিনারিজ ক্রয়, ঋণ পরিশোধ করতে চায়। এ টাকা উত্তোলনের কাজে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবং জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার অপেক্ষায় থাকা এ কোম্পানিটি সম্প্রতি ডাক্তারদের জন্য নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছে। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে ফেলেছে বহু চিকিৎসকের জীবন।
জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ২০ হাজার ৬০০ পিস মাস্ক এন-৯৫ হিসেবে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে (সিএমএসডি) সরবরাহ করেছিল জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। দুটি চালানের মাধ্যমে এ মাস্ক সরবরাহ করেছিল। প্যাকেটের মোড়কে এন-৯৫ মাস্ক লেখা থাকলেও ভেতরে পাওয়া যায় নকল মাস্ক। যা কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিদর্শনে উঠে আসে। ফলে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের ভাণ্ডার ও রক্ষণের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্প্রতি এ নিয়ে জেএমআই হসপিটালকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন। বিষয়টি স্বীকার করে জেএমআই হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক চিঠির জবাবে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সংকটময় সময়ে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে। জেএমআই হসপিটাল স্বপ্রণোদিত হয়ে মাস্ক তৈরির চেষ্টা করছে, যা এখনো প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে। যে সময় মাস্কগুলো সরবরাহ করা হয়, তখনো দেশে এন-৯৫-এর স্পেসিফিকেশন সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে বেশকিছু পণ্য সরবরাহ করে। সরবরাহকৃত পণ্যের সঙ্গে ভুলক্রমে প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে তৈরিকৃত ২০ হাজার ৬০০ পিস এন-৯৫ মাস্ক অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা এন-৯৫-এর স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে ‘কমপ্লাই’ করে না- বলে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও উপরোক্ত ব্যাখ্যা সদয় বিবেচনাপূর্বক সরবরাহকৃত মাস্ক ফেরত দিয়ে আমাদের অনিচ্ছাকৃত সম্পাদিত ভুলের দায় হতে মুক্তি দানে বাধিত করবেন।’ করোনা ভাইরাস মহামারিতে এভাবে নকল মাস্ক সরবরাহ করে চিকিৎসকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য বলেন, যে কোম্পানি মহামারির মধ্যে নকল মাস্ক দিয়ে চিকিৎসকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, সেই কোম্পানির কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এমন ঘৃণ্য কাজ যে প্রতিষ্ঠান করেছে, সেই প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু করবে এমনটা আশা করা যায় না। সুতরাং প্রতিষ্ঠানটিকে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে দেয়া উচিত হবে কিনা তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভালো করে ভেবে দেখা উচিত। যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জাগো নিউজকে বলেন, আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে একটি কোম্পানিকে বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্ত পূরণ করে যে কোনো কোম্পানি আইপিওতে আসতে পারে। তবে আমি মনে করি আইপিও অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক সফলতা ও স্বচ্ছতার পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সততা ও মানবিক গুণাবলিকে বিবেচনায় নেয়া উচিত।