স্ত্রী-সন্তানরা ছেড়ে গেছে : বয়োবৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বাকী জীবনটা হাসপাতালেই পার করতে চান

0

এস এস মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর)॥ বয়োবৃদ্ধ নুরুল ইসলামের বয়স এখন ৮১ বছর। বাড়ি নোয়াখালী জেলার রায়পুর উপজেলার চরপাতা গ্রামে। তিন ছেলে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ছেলেরা ঢাকাতে জমিও কিনেছেন বাড়ি নির্মানের জন্য। তিন মেয়ে-জামাইয়ের অবস্থাও বেশ স্বচ্ছল। নুরুল ইসলামের অভিযোগ বাস্তভিটাসহ সহায় সম্পত্তি সব ছেলে-মেয়েদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার পর থেকে তাদের কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। এমনকি শেষ বয়সে তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছে ছেলে-মেয়েদের কাছে। তাই কোন উপায়ন্ত না পেয়ে বয়োবৃদ্ধ নুরুল ইসলাম প্রায় আট বছর আগে অভিমান করে বাস্তভিটা ছেড়ে চলে আসেন যশোরের মনিরামপুরে বড়বোন রবেয়া বেগমের বাড়িতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানেও তার ঠায় হয়নি। বছর দুয়েক আগে বড় বোন মারা যান। নুরুল ইসলাম অসুস্থ্য হয়ে গতবছর ভর্তি হন মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু নুরুল ইসলামের অভিযোগ স্ত্রী সন্তানরা তার কোন খোঁজখবর না নেওয়ায় তিনি একবছর যাবত পুরুষ ওয়ার্ডের ১৩ নং সিটে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন অবস্থান করা এবং ভাল ব্যবহারে নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে বেশ সমাদর করে থাকেন। ফলে নুরুল ইসলামের প্রত্যাশ্য বাকী জিবনটা তিনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই কাটাতে চান। এ নিয়ে কথোপকথনে তার কাছ থেকে জানাগেছে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত একাকিত্ব থাকার গল্প।
নুরুল ইসলাম জানান, বসতবাড়িসহ জমাজমি সন্তানদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার পর থেকে পরিবারবর্গের অবহেলার পাত্র হন তিনি। তিন ছেলে সেলিম, কামরুল এবং আলমগীর ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে বাংলাবাজারে মটরপার্টসের ব্যবসা শুরু করে। তারা ইতিমধ্যে ঢাকাতে জমিও কিনেছে বাড়ি নির্মানের জন্য। তিন মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ স্বচ্ছলতার সাথে জীবনযাপন করছে। নুরুল ইসলামের অভিযোগ সন্তানরা তার কোন খোঁজখবর রাখেনা। এমনকি স্ত্রী রিজিয়া বেগমও তাকে ছেড়ে সন্তানদের কাছে উঠেছে। ফলে অভিমান করে বাস্তভিটা ছেড়ে আট বছর আগে মনিরামপুর পৌরশহরের বিজয়রামপুরে তার বড়বোন রাবেয়া বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বছর দুয়েক আগে তার বোনের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে নুরুল ইসলাম অসুস্থ্য হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ্য হলেও বোনের বাড়িতে ওঠেননি। সেই থেকে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ১৩ নং বেডে দিনাতিপাত করছেন। নুরুল ইসলাম জানান স্ত্রী সন্তানসহ স্বজনরা তার কোন খোঁজখবর নেয়না। তার সাফ কথা স্ত্রী সন্তানদের অবহেলার পাত্র না হয়ে বাকী জীবনটা এভাবেই(স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) কাটাতে চান। তবে ভিন্ন কথা বলছেন নুরুল ইসলামের পরিবরাবর্গ। তার ভাগ্নে(বড় বোন রাবেয়ার ছেলে) আবদুল কাদের জানান, অনেক চেষ্টা করেছি মামাকে বাড়িতে রাখার। কিন্তু তিনি হাসপাতাল ছাড়তে নারাজ। একই কথা জানান নুরুল ইসলামের বড় ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক ভাল না থাকায় তিনি(নুরুল ইসলাম) সংসার ছেড়ে প্রায় আটবছর আগে বড় বোনের কাছে চলে যান। সেলিম অরো জানান, অনেক চেষ্টার পর বাবাকে তাদের কাছে আনতে পারেনি।
এ দিকে স্বাস্ত্য কমপ্লেক্সের স্টাফ নার্স নাজমা খাতুন জানান, একবছর যাবত নুরুল ইসলাম পুরুষ ওয়ার্ডের ১৩ নং বেডে অবস্থান করছেন। একেতো বয়োবৃদ্ধ তার ওপর ভাল আচরনের কারনে সবাই তার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখেন। তিনি আরো জানান, বর্তমান করোনা আতংকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় শুণ্যের কোঠায়। পুরুষ ওয়ার্ডে শুধুমাত্র রয়েছে এই বয়োবৃদ্ধ নুরুল ইসলাম। ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত জানান, শুধুমাত্র মানবিক কারনে এভাবেই তাকে একবছর যাবত এখানে রাখা হয়েছে এবং সরকারি অর্থ দিয়েই তার ভোরনপোষন করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, ভর্তির পর একটানা তিন সপ্তাহের বেশি রোগি না রাখার নিয়ম রয়েছে। ফলে তিন সপ্তাহ পর তাকে রিলিজ করে পর দিন আবারো নতুন করে ভর্তি করা হয়। বয়সের বিবেচনা মানবিক কারনে তাকে রাখা হয়েছে।