রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার কারণে গত মাসখানেক ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, তেল প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এর মধ্যে নতুন করে দাম বেড়েছে রসুনের। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ৭০ টাকার দেশি রসুনের দাম উঠেছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুন দাম বেড়েছে। আর ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা রসুন। এতে বিপাকে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে রসুনের কজিতে দাম বেড়েছে ৯১ শতাংশ। গত বছর এই সময় রসুনের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আর বছরের ব্যবধানে আমদানিকরা রসুনের কেজিতে দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। গত বছর এই সময় রসুনের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে উৎপাদিত রসুন বাজারে আসলেই দাম কমে যাবে। সাধারণত নতুন দেশি রসুন আসা শুরু হলে দাম কিছুটা কমেও যায়। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় রসুনের দর। ভরা মৌসুমেও রসুনের এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অন্য দিকে রসুনের ভালো দাম পেয়ে খুশি দেশের কৃষকরা। রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়দিন আগেও ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশি রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১৯০-২১০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজিতে।
দেশে এখন রসুনের ভরা মৌসুম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন রাজধানীতে রসুনের চালান আসছে। এরমধ্যেও পণ্যটির এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। মোবারক হোসেন নামের একজন ক্রেতা জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানিকারকরা রসুন কিনে গুদামজাত করছেন। তাদের কারণেই দাম বেড়েছে। বাজারে এখন অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দামই চড়া। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এমনিতেই অভাবের মধ্যে আছে। এ অবস্থায় বাজার এতো চড়া হলে মানুষ বাঁচবে কি করে? সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা। কিন্তু তাদের কোন মাথা ব্যথা দেখছি না। সবকিছুর দামই ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই।
রাজধানীর খুচরা ব্যাবসায়ীদেরও একই অভিযোগ। কাওরান বাজারের রবিউল নামের একজন মসলা বিক্রেতা বলেন, আমদানিকারকরা রসুনের সংকট তৈরি করে তারাই দাম বাড়িয়েছেন। আমরাও বিপদে আছি। কারণ দাম বাড়লে আমাদের চালান বেশি লাগে কিন্তু লাভতো বেশি হয় না। তাছাড়া দাম বেড়ে গেলে ক্রেতাও কমে যায়। দেশে যে পরিমাণ রসুন উৎপাদন হয় দেশের মানুষ তাই খেয়ে শেষ করতে পারবে না। অথচ ভরা মৌসুমেও রসুনের সংকট, দামও চড়া। এদিকে দেশে উৎপাদিত রসুনের দাম বাড়ায় কৃষকরা অন্তত খুশি। নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তর বিল চলনবিলের প্রায় ৯৫ ভাগই রসুনের আবাদ হয়। এ অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে তুলেই বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। লকডাউন পরিস্থিতিতে এলাকার বাজার সেভাবে না বসলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যবসায়ীরা রসুন কিনে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক কৃষক আবার দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনায় বেশি লাভের আশায় বিক্রি না করে ঘরেই রেখে দিচ্ছেন। সর্বশেষ বাজার দর অনুযায়ী, এখানে প্রতি মণ মাঝারি সাইজের রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকায়। যা কেজিতে দাঁড়ায় ৮৫-৮৭ টাকা। আর বড় রসুন মান ভেদে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। যা কেজিতে পড়ে ১০০ থেকে ১১২ টাকা। এই দেশি রসুনগুলোই ঢাকার খুচরা বাজারে কেজিতে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই এলাকার কৃষকরা।