লকডাউনে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন জেগে উঠেছে প্রাণীকূল, সজীব বৃক্ষলতা

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন লকডাউনে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের কারণে বনবিভাগ পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ আর সীমিত আকারে জেলে প্রবেশের অনুমতিতে সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি জেগে ওঠেছে। বনের অভ্যন্তরে নেই কোলাহল, নেই নৌযান চলাচলের বিকট শব্দ। এ অবস্থায় নদী ও খালের চরাঞ্চলে দেখা মিলছে বাঘ, হরিণ, বানর, বনমোরগ, সজারু, সাপ, পাখিসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর। নদী ও খালে ভেসে বেড়াচ্ছে কচ্ছপ, কুমির, শুঁশক, ডলফিনসহ নানান জলজ প্রাণী। এ যেন নতুন এক সুন্দরবন! প্রাণীকূলের পাশাপাশি ভিন্ন আমেজ ও সজীবতায় ফিরেছে বনের বৃক্ষলতাও।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তের এ বন প্রায় ৪৫০টি নদী-খালে বেষ্টিত। বনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও কেওড়াসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। রয়েছে স্বনামে খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির ও বানরসহ নানা ধরনের প্রাণীকূল। বনবিভাগের তথ্য মতে, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ,৮টি উভচর প্রজাতির আবাসস্থল এবং নদী-খালে রয়েছে কাঁকড়া ও শামুকসহ ১২০ প্রজাতির মাছ। ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে আছে পৃথিবীর একক ম্যানগোভ বন সুন্দরবন। এ ছাড়া রয়েছে বনের প্রকৃতি ও প্রাণীকূলের ওপর রয়েছে মানুষের নিষ্ঠুর আচরণ। নিয়ম নীতি না মেনে বনের অভ্যন্তরে পর্যটক, পেশাজীবীসহ বৈধ ও অবৈধ প্রবেশকারীদের পদচারণা, বৃক্ষ নিধন ও বন্যপ্রাণী হত্যা-পাচারসহ নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সুন্দরনের জীববৈচিত্র্য। এতদিন সরকারি-বেসরকারি নানামুখী তৎপরতা ও উদ্যোগ নেয়া হলেও মানুষের এমন নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর এই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র। সুন্দরবনের দর্শনাীয় স্থান করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, চকিখালী ও হিরনপয়েন্ট এলাকা এখন পর্যটক শূন্য রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক সময়ের জন্য বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন। তবে কবে নাগাদ আবারও সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি এ কর্মকর্তা। সুন্দরবন নিয়ে গবেষণাকারী বেসরকারী সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিগত কয়েকদিন মানুষের বিচরণ না থাকায় প্রাণীকূল আনন্দ উৎসব করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাঘের প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়াসহ সুন্দরবন ও এর জীব বৈচিত্র সুরক্ষা হবে। বর্তমান অবস্থায় সুন্দরবনের জীব জন্তু, পশু পাখি, গাছ পালা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বনের বৃক্ষরাজি এখন সবুজ।