রোজার আগেই নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ আর মাত্র সপ্তাহখানেক পর মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাস শুরু। ইতোমধ্যে রোজার প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা যা বাড়াবার তা সম্পন্ন করেছেন। গত দু মাসেরও কম সময়ে কোনো কোনো পণ্যে কেজি প্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ভোক্তারা বলছেন রোজা শুরু হলে বাজারে সরকারি তদারকি বেড়ে যায়। এ কারণে নতুন কৌশল হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই দু মাস সময় নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে আসছেন।
পঞ্জিকামতে,আগামী ২৫ এপ্রিল (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। আর এ মাসের জন্য এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী অপেক্ষা করে থাকেন অধিক মুনাফালাভের উদ্দেশে। সাধারণত রোজার শুরুতেই সরকারি তদারকি বিভিন্ন সংস্থা তৎপর হয়ে ওঠে বাজার নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে এ ধরনের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গত কয়েক বছর ধরে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে রোজার দু মাস আগে থেকে পণ্যের দাম বাড়ানো শুরু করেন। তাই দেখা যায়, রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই পণ্যের বাজার কথিত স্থিতিশীল থাকে। এ বছরও মহামারি করোনাভাইরাসের বিপদে সবকিছু বন্ধের মধ্যে অসহায় কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষকে দুঃখ দুর্দশায় ফেলে ব্যবসায়ীরা তাদের অশুভ তৎপরতা চালানো থামাননি।
স্থানীয় পর্যায়ে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দু মাসেরও কম সময়ে যশোরের বড় বাজারে মুদি দোকানগুলোতে রোজার উপকরণ হিসেবে খেসারি ডাল প্রতি কেজিতে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়েছে ২০ টাকা, আমদানি করা মোটা মসুর ডাল বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা, মুগ ডাল কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা, আলু কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, রসুন কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা, আদা কেজিতে ১৪০ টাকা। মোটা স্বর্ণা চাল কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা, ২৮ ধানের চালের কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা, কাজললতা চালের কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। আর গত সাড়ে তিন মাসে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা ও চিনি কেজিতে বেড়েছে ৭ টাকা।
যশোরের বড় বাজারে বুধবার (১৫ এপ্রিল) মুদি দোকানগুলোতে খেসারি ডাল প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি খেসারি ডাল বিক্রি হয় ৮০ টাকা। আমদানি করা মোট মসুর ডাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাজারে বিক্রি হয় ৬৫ টাকা। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাজারে বিক্রি হয় ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হতে দেখা গেছে ২৫ টাকা, গত ১৩ মার্চ বাজারে আলু বিক্রি হয় ১৫ টাকা কেজি। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে, গত ২৭ মার্চ রসুন বাজারে বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি। আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয় ১৬০ টাকা। বাজারে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, গত ২০ মার্চ বিক্রি হয়েছে স্বর্ণা চাল ৩৬ টাকা। ২৮ ধানের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, গত ২০ মার্চ বাজারে বিক্রি হয় ৪৪ টাকা। কাজললতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, গত ২০ মার্চ কাজললতা বিক্রি হয় ৪৪ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৬ টাকা, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৮৭ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, বছরের শুরুতেই প্রতি কেজি চিনির দর ছিল ৫৮ টাকা।
বুধবার সকালে শহরের বড় বাজারে একজন ক্রেতা গৃহশিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, ‘গত কয়েক বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা রোজার বেশ খানিকটা আগেভাগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখা শুরু করেছেন। ফলে রোজা শুরু হলেও সরকারি তদারকি সংস্থাগুলো তাদের চালাকি ধরতে পারে না। কারণ প্রায়শ দেখা যাচ্ছে রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকে আর কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয় না। আর এই সিন্ডিকেটের কারণে খেসারত দিতে হয় আমাদের।’
বাজার করতে আসা একজন রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসে বন্ধের কারণে শহরে রিকশা নিয়ে বের হতে পারছি না। পুলিশ দেখলেই তাড়া করছে। ফাঁকে ফাকেঁ মহল্লার মধ্যে রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে বাড়তি দাম দিয়ে চাল, ডাল, তেল কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে, রোজার আগেই ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোর জেলা শাখার সহকারী পরিচালক মো.ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় সংস্থাটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সামনে রমজান মাস, রোজায় বাজার তদারকি জোরদার করা হবে। কোনোরকম অসংগতি পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কৃষি বিপণন অধিদফতর যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, ‘মসলাজাতীয় পণ্য যেমন পেঁয়াজ রাজবাড়ি,ফরিদপুর থেকে যশোরে আসে। সেখানে হাটে ব্যাপারিরা এখন বেচাকেনা করতে পারছে না, এ কারণে পেঁয়াজের দামটা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দোকানে ক্রয় মূল্য এবং বিক্রয় মূল্য টানিয়ে রাখতে হবে। আলু, পেঁয়াজ যারা বিক্রি করেন সেসব খুচরা দোকানে পাইকারি বাজারের ক্রয় মূল্যের রশিদ রাখতে হবে। ক্রয় মূল্যের সাথে সব খরচসহ শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা মূল্য সংযোজন করে বিক্রি করতে পারবে। বাজার তদারকি আছে, এবং আরও জোরদার করা হচ্ছে। খুচরা দোকানিরা যদি ক্রয় মেমো দেখাতে না পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন এবং জেলা বাজার কর্মকর্তা সমন্বয়ভাবে বাজার তদারকি কাজ করছে।’