সাবিলাকে ধুয়ে দিলেন নির্মাতা বোরহান

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী সাবিলা নূর। ৪০টির বেশি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। করেছেন গ্রামীণ ফোন, নেস্কেফে ও প্রান ফিট-এর মতো কয়েকটি বিজ্ঞাপনও। এই অভিনেত্রীর উপরই ক্ষেপেছেন তরুণ প্রয়োজক ও নির্মাতা বোরহান খান। যিনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু শর্টফিল্ম ও বিজ্ঞাপন বানিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ সাবিলা নূরের উপর নাখোশ হলেন কেন? সম্প্রতি ফেসবুকে একটি লম্বা স্ট্যাটাস দিয়ে তার ফিরিস্তিই তুলে ধরেছেন নির্মাতা বোরহান খান। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো-
‘এই মহিলাটা সবসময় কোনো না কোনো নেগেটিভ বিষয় নিয়ে স্ট্যান্টবাজি করে নিজেকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। কখনো সালমান মুক্তাদিরের সাথে প্রোপজ করার নাটক করে, কখনো লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করে, কখনো ভুয়া ভিডিও নিজের ভিডিও হিসেবে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর কিছুদিন গণমাধ্যম থেকে আড়ালে চুপ করে লুকিয়ে থেকে জনগণকে সমালোচনার সুযোগ দিয়ে। এরপর যখন বোঝে, না যথেষ্ট প্রচারণা হয়েছে নিজের, তখন এসে নিজের সাফাই গাওয়া শুরু করে, যেটা কিন্তু ঘটনা ঘটার প্রথমেই বলা যেত গণমাধ্যমে। তোমার প্রতি যে চিন্তাধারা ছিল সব আজ নেগেটিভ করে নিলাম। ফটকা, সবসময় স্টান্ট বাজি করে ফোকাসে আসতে চাও। সত্যি কথা বলতে ভাড়ামি আর ন্যাকামি ছাড়া গর্ব করার মত কালজয়ী বা মনে রাখার মত কোনো অভিনীত চরিত্র তোমার নেই। তাই এইরকম সস্তা উপায় অবলম্বন ছাড়া সেলিব্রিটি হওয়ার উপায় নেই। এটা তিতা হলেও সত্য।’
‘শর্টকাটে হলিউড নায়িকা হতে গেছিল ভাব খানা এমন। একজন সুপারস্টার হতে শুধু সুন্দর চেহারা বা সুন্দর অভিনয় জানলেই হয় না। সারা বিশ্ব সম্পর্কে ধার‍ণা থাকতে হয়। কারণ তারা শুধু নির্দিষ্ট গন্ডির নায়ক (Hero) না, সারা বিশ্ব জয় করা আইকনিক নায়ক। তাই সারা বিশ্ব সম্পর্কে সর্বনিম্ন সাধারণ জ্ঞানটুকু তারা রাখে। তারা অন্য কোনো দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কেমন সেটাও খোজ রাখার চেষ্টা করে। তা হলিউডের তুলনায় যত নগণ্যই হোক না কেন। তুমিও যদি জ্ঞান পিপাসু হতে তাদের মত, তবে জানতে পারতে কিছু ব্যাপার। বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত হলিউড কর্মী অস্কার স্টেজে উঠেছিল। বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়েরা অ্যামেরিকান চলচ্চিত্র পাড়ায় কাজ করছে এবং হলিউড নায়ক নায়িকাদের সাথে একই প্রজেক্টে কাজ করছে। নিয়মিত উঠাবসা হচ্ছে, তাদের সাথে দেখা হচ্ছে। যেমনটা তোমার সাথে তোমার শুটিং ইউনিটের লোকজনের হয়। তুমি একটু গবেষণা করলেই জানতে পারতে যে, তোমার দেশের ছেলেরাও sorry আমাদের দেশের ছেলেরাও English Language সিনেমা বানানোর চেষ্টা করছে। ও হ্যা, ইংরেজি ভাষায় নির্মিত যে সিনেমা আমেরিকার সিনেমা হলে চলে সেটা হলিউড সিনেমা হিসেবে গণ্য। তোমার জ্ঞাতার্থে জানালাম। যাই হোক মূল কথায় আসি। ’
‘এক ভাইয়ের পোস্ট থেকে হঠাৎ জানতে পারলাম, আমার পছন্দের একটা মহিলা শাপিলা নূর, দুঃখিত সাবিলা নূর (বেশি স্টাইল করতে গিয়ে শাপিলা বলে ফেলেছি) যাকে ভবিষ্যতে সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ইচ্ছা ছিল (রাজি নাও হতে পারত)। তিনি নাকি সুইসাইড স্কোয়াড খ্যাত হলিউড অভিনেতা Jared Leto ’র সাথে লাইভ ভিডিওতে চ্যাটের সুযোগ পেয়েছিলেন, দুঃখিত চ্যাট-এর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চ্যাট-এ নাকি তিনি নিজের দেশের প্রতি চরম আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও হীনমন্যতা দেখিয়ে এসেছেন। বরং যখন লেটো সাহেবের কথায় বোঝা গেল যে বাংলাদেশ সম্পর্কে একজন বিদেশি হিসেবে যথেষ্টর চেয়ে অবগত তার পরেও এই মহিলা মাজায় ওড়না বেধে বিরোধিতা করতে লাগল। করারই বা কি আছে, ভেবেছে আমাদের দেশের মিডিয়াকর্মীদের যেভাবে প্যারা দেই এবং তা যেভাবে মেনে নেয় সেভাবে লেটো সাহেবকেও গায়ের জোরে মানিয়ে নেব। লেটো সাহেব যখন সাবিলার ‘কোন দেশ’ জানতে চাইল, তখন সাবিলা বাংলাদেশ বলল। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই পন্ডিত মেয়েটা লেটোর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার নাকি এই টাইপ বলা শুরু করল, ‘আপনি মনে হয় জীবনেও এই দেশের কথা শোনেন নাই’ (“You probably haven’t even heard of this country”)। তখন লেটো সাহেব কিছুটা হাসি মুখে হলেও serious ভবে বলে বসলেন, ‘তোমার আমাকে কোন লেভেলের বলদ মনে হয়” (‘How stupid do you think i am’)।’
‘এ কথাটা বলার পর সাবিলার দেশের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসা উচিত ছিল। কিন্তু না, তখন সে আবার বলল, ‘না, অনেকে ভাবে এটা ভারতের একটা অংশ। অনেকেই চেনে না।’ বাংলাদেশকে পাশের দেশ ভারতের অংশ মনে করার অপশন খুলে দিল লেটোর জন্য। যা লেটো গ্রহণ তো করেইনি বরং তাচ্ছিল্য ভরে বলল, ‘সবাই চেনে। এটা তোমার সমস্যা, আমার না। আমি চিনি, আমি ভালোবাসি। সবাই বাংলাদেশকে চেনে। এটা অনেক বড় একটা দেশ।’ (Thats your prob, not my prob, Everybody knows Bangladesh, Its a gaint country’) এখানে এসে আবার ঝামেলা বাধল যে আমাদের দেশ তো জায়ান্ট না। আমরা তো চুনো পুটির দেশ। কিন্তু সাবিলার মাথায় ছিল না যে, আমাদের দেশ অনেক কারণে পরিচিত সারা বিশ্বে। এই যে কিছুদিন আগেও তো ‘রোহিঙ্গা’ ব্যাপারটা নিয়ে সারা বিশ্ব মিডিয়া সরব ছিল। এদেশে এসে ঘুরে গেল অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সুপার মডেল গিগি হাদিদ আরো কত আন্তর্জাতিক পরিচিত লোকজন। ‘থর’ সিনেমা খ্যাত নায়ক ক্রিস হেমসওয়ার্থকে নিয়ে ঢাকার প্রেক্ষাপটে ‘এক্সট্রাকশন’ নামক হলিউড সিনেমা হয়েছে। তো হলিউড পাড়ার সবারই খোঁজ নেওয়ার কথা কি এই ঢাকা, কোথায় এই ঢাকা। বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থায় নেই পরিচিতির দিক দিয়ে। এখন যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত পাগলের কথা ভাবেন যে, ট্রাম্প চেনে কিনা তাহলে তো হবে না। নিজের দেশ নিয়ে সবসময় আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলব দেশের নাম। যদি না চেনে বা জানতে চায়, তখন বলা উচিত কোথায় দেশটি। তবে ‘লেটো’ সাহেব আমাদের দেশ সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখেন যা বুঝলাম। ডাল, নান রুটি, চানা মসলা এই সব খাবার সম্পর্কেও বেশ ভালো জ্ঞান আছে। ’
‘সব দেশেরই অভিনেতা-অভিনেত্রী, মিডিয়া বা চলচ্চিত্র কর্মীর নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেম বা নিজের দেশকে বড় করে দেখানোর প্রচেষ্টায় থাকেন সবসময়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কী মাঝে মাঝে উল্টো হয় নাকি বুঝি না। মাতৃভাষাকেও আমেরিকান Accent-এ উচ্চারণ করেন। কেউ কেউ তো বাংলার চেয়ে ইংরেজি বলেন বেশি। ব্যাপারটা এমন নয় যে ইংরেজি বলা যাবে না। কিন্তু বাংলাকে কেন ইংরেজদের ভাবে বলতে হবে। তাতে কি নিজের মধ্যে হলিউড নায়ক বা নায়িকা অনুভূতি আসে নাকি! মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সব তথাকথিত সস্তা সেলিব্রিটিদের মধ্যে এই প্রবণতাটা বেশি। আবার আমাদের দেশের সাধারণ জনগণই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটারে তাদেরই লাখ লাখ ফলোয়ার। ইউটিউব চ্যানেল খুললে তাদেরই আমরা ২ দিনে ১০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার হোল্ডার বানিয়ে দেই, আবার তাদের ভুলেই গালি দিচ্ছি। এরাই দেশের বিশেষ দিনে দেশীয় বিজ্ঞাপন বা ভিডিওতে ডাক পাবে অথবা দেশের কোনো ইভেন্টে গিয়ে পাকনামি করবে, মিথ্যা দেশপ্রেমের লাইন বলে। আসলে হীনমন্যতা জিনিসটা আসে নিজের চিন্তার গন্ডির সীমাবদ্ধতা থেকে। নিজে যখন ভালো Level-এর কাজ করবেন তখন নিজের বা নিজেদের প্রতি সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যাবে। আপনি নিজেই বুঝতেছেন যে আপনি মানহীন ভাড়ামি কৌতুক করছেন। এইসব অভিনয় বা ভিডিও দর্শক একবার দেখবে এরপর ভুলে যাবে। আজ জয়া আহসান আপার মত সমাজ, দেশ, জীবন নিয়ে কিছু কাজ করুন। চিন্তার পরিধি বাড়ান, দেখবেন নিজের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে আর মানুষও মাথায় তুলে নাচবে। ’
‘এই সমস্ত কথাগুলো লেটো সাহেব আর সাবিলার ভিডিওটা দেখার আগে লেখা ছিল। ফেসবুকে লেখালেখি আর তাদের কথপোকথনের লাইনগুলো ইনবক্সে পড়ে, চ্যাটে দু-একজনের মতামত শুনে এই স্ট্যাটাস লেখা। কিন্তু হঠাৎ একজন ভিডিওটা দিল। ভালো করে দু-একবার দেখলাম। বিশ্বাস করেন ভাই, পুরো ধারণাই চেঞ্জ হয়ে গেল। কারন, তাদের Expression ও কথা বলার ধরণ। যতটা সিরিয়াস ভাবে সবাই আমাকে বলল ততটা সিরিয়াস নয়। এক সাংবাদিক জয় ভাইর সাথে আলাপ করলাম, তিনিও বললেন ভিডিও দেখার আগে উনিও নেগেটিভ ভেবেছিলেন, সাবিলা কিছুটা হীনমন্যতায় ভুগেছিল কিন্তু আবেগপ্রবণ হয়ে কথা বলেছে স্রেফ। যাই হোক, ভিডিও দেখার পরে বলব উপরের লেখাগুলো হয়তো যুক্তিযুক্ত কিন্তু সাবিলার এখানে কোনো দোষ আর চোখে পড়ছে না। সে নিখাদ আবেগ থেকে কথাগুলো বলেছে। আর হঠাৎ করে এতবড় একজন হলিউড সেলিব্রিটির সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে নার্ভাসনেস থেকে বলে ফেলেছে। এখানে সাবিলার সরলতা দেখা উচিত কুটিলতা নয়। তার কথাকে আসলে এতটা নেগেটিভ ভাবে দেখা উচিত হচ্ছে না। একটা মানুষ ফ্যান হিসেবে যখন কোনো জনপ্রিয় লোকের সঙ্গে কথা বলে, তখন কথা সাজাতে পারে না অনেক সময়। এটা আমার আপনার ক্ষেত্রেও হবে। সে সেলিব্রিটি তবে কোনো রোবোট নয়, মানুষ। ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখা উচিত। এটা লেটো সাহেব ওই ভিডিও শেষ করার পর মনে রাখেননি। তার কোটি কোটি ভক্তদের সাথে কথপোকথনের একটা অংশ মনে করে ওখানেই ভুলে গেছেন। কিন্তু আমরা ইস্যু বানিয়ে ফেলেছি।