চাহিদা নেই মাছের, রাজগঞ্জ ও বাঁকড়ার চাষিরা হতাশ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ ও ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া অঞ্চলের মাছ চাষিরা। কর্মহীন হয়েছেন জেলে পাড়ার মানষ। মাছ ধরার ব্যস্ততা না থাকায় তারা অবসর সময় পার করছেন। রাজগঞ্জ, ঝাঁপা, কোমলপুর, মল্লিকপুর, ষোলখাদা, মশ্মিমনগর, ভরতপুর, চাঁপাতলা, কাঁঠালতলা, হরিহরনগর, রড়চেৎলা ও ঝিকরগাছার বাঁকড়া অঞ্চলের বেলেডাঙ্গা উজ্জ্বলপুর দিকদানা মাটশিয়ার কয়েক হাজার মানুষ মাছ চাষের সাথে সম্পৃক্ত। বিগত কয়েক বছর ধরে তারা মাছ চাষ করে যেমন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তেমনি আবার মাছ ধরা ও বিপণন পরিবহনের মাধ্যমে আবার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই অঞ্চলে প্রতি বছর শ শ বিঘা ঘেরে ব্যাপক আকারে পাবদা পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছের চাষ হয়ে থাকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। মাছের গ্রোথও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো । শীত মেীসুম শেষ হতে না হতেই খাদ্য খাইয়ে ও প্রয়োজনীয় পরিচর্যার ফলে তারা মাছ বাজার উপযোগী করে তুলেছেন ।
সরেজমিন সংশ্লিষ্ট মাছ চাষিদের সাথে কথা বলা জানা যায়,চলতি বছর এ অঞ্চলে হাজার হাজার বিঘা ঘেরে পাবদা পাঙ্গাস তেলাপিয়া রুই কাতলা মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছের ব্যাপক চাষ হয়েছে। মাছের গ্রোথও অনেক ভালো। শুধু বাজারে বিক্রির অপেক্ষায়। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাজার ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এবার তারা অনেক বিপাকে পড়েছেন। এখানকার উৎপাদিত এ সব মাছ স্থানীয় জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। বিশেষ করে ঢাকা সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় পাইকাররা এখান থেকে মাছ ক্রয় করে থাকেন। পাশাপাশি এই অঞ্চলের উৎপাদিত পাবদা মাছ বেনাপোাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে এসব পাইকার অনেকেই মাছ ক্রয় করতে আসছে না। আর যারা আসছেন তারাও সংখ্যায় অনেক কম। মাছের দাম ও বেচাকেনার পরিমাণ দুটোই অনেকাংশে কমেছে। যে মাছের দাম কিছুদিন আগেও মণ প্রতি পাঁচ হাজার টাকা ছিল এখন তা তিন হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। পাবদা মাছ গত মৌসুমে মণ প্রতি ১৫ হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল তা এই মুহূর্তে ১০হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে। এদিকে মাছ বিক্রয় উপযোগী হওয়ার পরও তা বিক্রয় করতে না পারায় মাছের যেমন বাড়তি খাদ্য খাওয়াতে হচ্ছে, তেমনি বাড়তি পরিচর্যা ব্যয়ও করতে হচ্ছে। আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক ঘেরে পানি দূষিত হয়ে প্রতিনিয়ত মাছ মরে যাচ্ছে। সব কিছু মিলে এই অঞ্চলের মাছ চাষিরা অনেক বিপাকের মধ্যে পড়েছেন।
ঝাঁপা গ্রামের মাছ চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, তার ঘেরে পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আছে। কিন্তু বাজার ভালো না থাকার কারণে তিনি বিক্রি করতে পারছেন না। এখন মাছ বিক্রি করলে অনেক লোকসান গুণতে হবে। অপর চাষি আব্দুস শহীদ জানান, তার ঘেরের পাবদা মাচ বিক্রয় উপযোগী হয়েও ভালো দাম না থাকার কারণে তিনি বিক্রি করতে পারছেনা না। আবার প্রতিনিয়ত পানি দূষিত হয়ে তার ঘেরের মাছ মারা যাচ্ছে। বেলেডাঙ্গা গ্রামের মাছ চাষি নুর আলী জানান, গত বছর তিনি ঘের থেকে তার উৎপাদিত পাবদা মাছ বিক্রি করেছেন মণ প্রতি ১৫ হাজার টাকার ওপরে, সেখানে এবার মণ প্রতি ১০ হাজার টাকাও দাম হচ্ছে না। এদিকে এই দুই অঞ্চলের মাছ বিক্রয়ের অন্যতম বড় স্থান রাজগঞ্জ বাজারের আড়ৎগুলোতেও বেচাকেনা কমে গেছে। কোমলপুর ও বেলেডাঙ্গার জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিদিন জাল টানার ওপর চলে যাদের জীবন জীবিকার চাকা। সেই সাথে পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বেকার হয়ে পড়েছেন।