আরও ৩২২ নাগরিককে সরিয়ে নিলো যুক্তরাষ্ট্র: ৬ স্পেশাল ফ্লাইটে ফিরেছেন ৯ শতাধিক বিদেশি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার অাশঙ্কায় দ্বিতীয় দফায় স্পেশাল ফ্লাইট পাঠিয়ে আরও ৩২২ নাগরিককে সরিয়ে নিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের ভাড়া করা উড়োজাহাজটি সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে যায় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচএম তৌহিদ উল আহসান। তিনি জানান, মোট ৩২২ মার্কিন নাগরিক, দুটি পোষা কুকুর আর একটি বিড়ালকে বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি সন্ধ্যা ৫ টা ৫৮ মিনিটে আকাশে উড়ে।
এদিকে সেগুনবাগিচা জানিয়েছে- করোনার এই কঠিন ও বিশেষ পরিস্থিতিতে ২০ জন হুইল চেয়ার আরোহী অসুস্থ-বয়োবৃদ্ধসহ স্পেশাল ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দরে বিদায় জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। এদিকে গত শুক্রবার স্টেট ডিপাটমেন্টের বিবৃতিতে জানানো হয়- অামেরিকানদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের দ্বিতীয় স্পেশাল ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দোহা হয়ে ওয়াশিংটনের অদূরে (ভার্জিনিয়াস্থ)ডালিস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছাবে সোমবার পৌঁছাবে। গত ৩০শে মার্চ প্রথম দফায় বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয়ে ২৬৯ মার্কিন নাগরিককে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ওই ফ্লাইটে দূতাবাসেরর মধ্যম সারির বেশ ক’জন কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারও ফিরে যান। পারসোনাল চয়েজ বা ব্যক্তিগত পছন্দে অনেক কূটনীতিক ফিরে গেলেও রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ঢাকাতেই থাকছেন এবং দূতাবাসের কার্যক্রমও চলবে বলে আগাম জানানো হয়। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ফ্লাইটেও বেশ ক’জন কূটনীতিক এবং তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্র গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ঢাকা ফিরবেন।
এদিকে ঢাকাস্থ বিদেশি নাগরিকদের সার্বিক সহায়তায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৫ই এপ্রিলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় অবস্থিত যেসব বিদেশি মিশন তাদের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের এ দুর্যোগকালে পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের যে কোনো সহযোগিতার বিষয়ে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সেই ধারাবাহিকতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি বিশেষ ফ্লাইটসহ এখন পর্যন্ত ছয়টি বিশেষ ফ্লাইটে ৯ শতাধিক বিদেশি নাগরিক নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তাদের ফেরাতে স্ব স্ব দূতাবাস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী অধিকাংশ যাত্রীই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত স্থায়ী বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সেদেশে ফিরে যাওয়ার আইনী বাধ্যবাধকতার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ফেরত গেছেন। জাপানি এবং রাশিয়ান নাগরিক যারা বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন তাদের একটি বড় অংশ এদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে। তবে এখনও যেসব বিদেশি নাগরিক বিশেষত কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্য ঢাকায় (অবশিষ্ট) রয়েছেন করোনা পরিস্থিতিতে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুবিধা এবং সহযোগিতায় সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, অনেক দেশই স্পেশাল ফ্লাইট পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। ঢাকায় কর্মরত উদ্বিগ্ন বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের পরিবার-পরিজনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। গত ২৫ শে মার্চ ড্রুক এয়ারের দুটি স্পেশাল ফ্লাইটে ১২৬ জন ভুটানিজ নাগরিককে থিম্পু ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফেরত যাওয়া ওই দলে ব্যবসায়ী, পেশাজীবি ছাড়াও ঢাকাস্থ ভুটান দুতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। একই দিনে স্পেশাল ফ্লাইটে ২৩০ নাগরিককে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয় মালয়েশিয়া। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োহাজাজ ভাড়া করে ৩২৭ নাগরিককে সরিয়ে নেয় জাপান। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ১০৪ জন জার্মান নাগরিক এবং ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশন কার্যালয়ে কর্মরত ৯ জনসহ ইইউ জোটের ২৭ রাষ্ট্রের ৬ শতাধিক নাগরিক ঢাকা ছাড়তে চান। এ নিয়ে ঢাকায় ইইউ দেশের কূটনীতিকেরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় যোগাযাগ করছেন। তারা ইউরোপের সঙ্গে ঢাকার বন্ধ ফ্লাইট চালুর জন্য চাপ দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের তরফে তাদের চার্টার্ড ফ্লাইটের পরামর্শ এবং এতে কারিগরি সহায়তার পূর্ণ আশ্বাস দেয়া হয়েছে।