আমরা এখনও শঙ্কামুক্ত নই: মান্না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সরকার নতুন করে ৭ দিন সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। ইতালি যেখানে জানিয়েছে সে দেশে সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসছে, সেখানে আমাদের সরকার দেশে করোনার সঠিক চিত্র আমাদের সামনে তুলে না ধরে সাধারণ ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। এতে অন্তত এটা স্পষ্ট যে, আমরা এখনও ঝুঁকির মধ্যে আছি। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছুটি বাড়ানো হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন কীভাবে পাবেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আমরা পাইনি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালকের বক্তব্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে। মান্না বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন, করোনা নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় আমরা তা মোকাবিলা করতে পারছি। পর পর দুদিন নতুন রোগী শনাক্ত না হওয়ার পর মীরজাদী সেব্রিনা (আইইডিসিআর পরিচালক) বলেছেন, এতে নির্ভার হওয়া চলবে না। আমরা এখনও শঙ্কামুক্ত নই। পত্রপত্রিকায় প্রতিদিন করোনার উপসর্গে মৃত্যুর অনেক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দিনে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। অথচ পরীক্ষা করানোর জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফোন করছেন, আইইডিসিআরসহ অন্যান্য হাসপাতালে ঘুরছেন। তিনি আরও বলেন, এত বড় বৈশ্বিক বিপর্যয় সামাজিকভাবে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে জনগণকে বিপদের দিকে ঠেলে দিবেন না। জনগণকে সঠিক তথ্য দিন। করোনা বিপর্যয় নিয়ে আমরা গত ২০ মার্চের সংবাদ সম্মেলন, ২৪ মার্চের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন এবং সর্বশেষ ২৯ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ দেশের জনগণের সামনে এই বার্তাই দিয়েছি যে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক পক্ষ-প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছি না, আমরা সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগের মোকাবিলা করতে চাই। তবে এই মুহূর্তে প্রয়োজন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারের ভুল পদক্ষেপগুলোকে চিহ্নিত করা। প্রয়োজন সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানুষকে সচেতন করা, মানুষের মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এর মধ্যে বগুড়া, নওগাঁসহ বিভিন্ন জায়গায় করোনা রোগী সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তির তাদের নিজেদের বাড়িতে বা হাসপাতালে স্থান হয়নি। তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। চিকিৎসা ছাড়াই তারা মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা এই রোগীদের তাদের বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকতে বাঁধা দিয়েছে। সরকারের উচিত সমাজের প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন এসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণের ঘাটতি রয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় চিকিৎসকরা আক্রান্ত হওয়ায় তারা সেবা দিতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের সাথে আলোচনা করে হাসপাতালগুলোকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে যাতে করোনা আক্রান্ত রোগীসহ সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একজন রোগী ১৬ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে থেকে ৬টি হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। মান্না বলেন, নাগরিক ঐক্য ইতোপূর্বে করোনার চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য টিম তৈরি করেছে। সেখানে যুক্ত হয়েছেন সৈয়দপুর থেকে ডা. মাশরুরুল হক বিক্কু (০১৭৮৫৩৩৭০৭৯)। তিনি সৈয়দপুরে নিয়মিত রোগী দেখছেন। বিনামূল্যে গরিব রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। আমরা তার নিরাপত্তার জন্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণ পাঠিয়েছি। তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের কাছে অনুরোধ আপনারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন না, একে অপরকে সহযোগিতা করুন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। আমরা আগেই বলেছি সরকার এখন পর্যন্ত এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। দেশের নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোকে বাঁচানো করোনা থেকে মানুষকে বাঁচানোর সমান গুরুত্বপূর্ণ।