‘ফোনে ফোনে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ১৪ টাকা আলুর কেজি। একদিনের ব্যবধানে হয়ে গেছে ২৫ টাকা। আর পেঁয়াজের প্রকার ভেদে প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ছিল বুধবার (১৮ মার্চ)। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এ দৃশ্য সিলেটের পাইকারি বাজারখ্যাত সুবহানীঘাট ও কালিঘাটের।
বৃহস্পতিবার ১০ মিনিটের ব্যবধানে আলু তিন টাকা কেজিতে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। আর দিন শেষে ২৫ টাকা বিক্রি হয়েও আলুর সংকট দেখা দেয় শহরের পাইকারি এ দু’টি আড়তে।
আলুর দাম বেড়ে যাবার বিষয়ে সিলেটের সুবহানীঘাট কাঁচা বাজারের আলু ব্যবসায়ী দুলু মিয়া বলেন, ‘আমরা কি করবো, ব্যবসায়ীরা ফোনে ফোনে কথা বলেই আলুর সংকট দেখাচ্ছেন। দাম বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। তাই ২০ টাকা করে কেজি বিক্রি করতে বলেছেন। সে হিসেবে ৬৫ কেজির আলুর বস্তা ১২৩০ টাকা বিক্রি করছি।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে আগের দিন আলু ১৪ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক লাফে হয়ে গেছে ২৫ টাকা। এতো গেলো আলু-পেঁয়াজ। প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে ৫০ কেজির বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।’
‘আগেরদিন যে চাল বিক্রি হয়েছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। এক দিনের ব্যবধানে সে চালের বস্তা বিক্রি হতে দেখা গেছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। তাও ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলোতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ভোজ্যতেল পাঁচ লিটার সাড়ে ৪০০ টাকার জার প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
বৃহস্পতিবার দিনভর সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লক ডাউন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতে। কার আগে কে মালামাল কিনে নেবেন এমন প্রতিযোগিতা বিদ্যমান ছিল সিলেটের সব স্থানে। আর পরিবহন বন্ধ হওয়ার বাহানা দেখিয়ে দোকানিরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। অনেক দোকানি মালামাল সংকট দেখালেও পরে বাসা-বাড়িতে গোদামজাত করা পণ্য মিনি ট্রাক দিয়ে এনে বিক্রি করতে দেখা যায় শহরের আম্বরখানার বারি ম্যানশনের একটি দোকানে।
ক্রেতারা বলছেন, সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাবো। তাই আগেভাগে কিনে রাখতে হচ্ছে।
ওই দোকানে চাল কিনতে আসা সুবিদ বাজারের আব্দুর রহিম বলেন, ১৭০০ টাকার চালের বস্তা বেড়ে হয়েছে ২৩০০ টাকা। দোকানিরা বলছেন, আরও দাম বাড়বে। তিনি সংশয়ে আছেন, যদি দাম বাড়ে, সবাই চালসহ অন্য নিত্যপণ্য কিনে নিচ্ছে, তাই তিনিও কিনতে এসেছেন।
নগরের মিরাবাজারের সোহেল আহমদ বলেন, যে চাল ১৭০০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। বুধবার তিনি বস্তাপ্রতি ২১৫০ টাকা করে চার বস্তা চাল কিনেছেন। সেইসঙ্গে অন্য নিত্যপণ্য কিনেছেন প্রায় ১৫ হাজার টাকার।
এতো বাজার একসঙ্গে করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারে লোকজন বেশি তাই খরচ বেশি লাগে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু চালের বাজারেই দাম বাড়েনি। সব পণ্যে সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
কেবল নিত্যপণ্যই নয়, ফার্মেসিগুলোতে নেই জীবাণুমুক্ত করার লিকুইড হেক্সাসল। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত একটি ছোট আকারের বোতল হেক্সাসল দ্বিগুণ দাম ২০০ টাকায়ও কিনেছেন ক্রেতারা।
আর সিলেট শহরে হঠাৎ করে দৈনন্দিন জিনিসপত্র কেনার হিড়িক পড়ায় বিরুপ পরিস্থিতি পড়েছে বাজারে। একটি বিশেষ মহল পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়াচ্ছে। আর কেনাকাটা করতে ক্রেতারাও শহরের পাইকারি বাজার থেকে অলিগলির দোকানে ভিড় করছেন। একই পরিস্থিতি গ্রামগঞ্জের বাজারেও।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ বাজার সেক্রেটারি মাওলানা কমর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গুজব ছড়িয়ে বাজারে চাল থেকে শুরু করে সবপণ্যের দাম বাড়তি রাখা হচ্ছে। এমনকি ফার্মেসিগুলোতে জ্বর, ব্যাথানাশক প্যারাসিটামল, সর্দি-কাঁশির সিরাপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে নেওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ফার্মেসিতে এসব ওষুধ মিলছে না।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে যাতে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম না বাড়ানো হয় এ জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের পাঁচটি মনিটরিং টিম হোম কোয়ারেন্টিন পরিদর্শন ছাড়াও পণ্যের দাম না বাড়াতে সতর্ক করে দিয়েছে। শুক্রবার (২০ মার্চ) সাতটি টিম বাজার মনিটরিংয়ে নামবে।
তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য রয়েছে। তাছাড়া ওষুধ আমাদের দেশে উৎপাদন হয়ে রফতানি হয়। তাই লোকজনকে তাড়াহুড়ো করে দাম দিয়ে পণ্য না কিনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ, চাল, আলুসহ নিত্যপণ্যে সংকটের কথা বললেও রাতের আঁধারে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক শহরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, দিনে এমনিতে শহরে ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ পণ্য পরিবহন করা ট্রাক শহরের প্রবেশদ্বার সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর রাতে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও গুজব ছড়িয়ে সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে।