অব্যবস্থাপনার অভিযোগ : ইতালি ফেরত ১৫২ জন আশকোনায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইতালি থেকে আসা সর্বশেষ ১৫২জন যাত্রীকে আশকোনার হাজী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। রোববার সকাল সোয়া ৮টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমান থেকে নামার পর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের আশকোনা হাজীক্যাম্পে নেয়া হয়। সেখানে আরেক দফা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। যদি কারো শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া না পাওয়া যায় তবে তাদের ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে।
বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. শাহারিয়ার সাজ্জাদ মানবজমিনকে বলেন, বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে কারো শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তাই তাদের আশকোনা হাজীক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। সেখানে আবার পরীক্ষা করা হবে। আশকোনার পরীক্ষায় যদি কারো শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায় তবে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। আর যদি না পাওয়া যায় তবে তাদের বাড়ি ঘরের তথ্য নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। তিনি বলেন ইতালি থেকে আসা বেশিরভাগ যাত্রীরা ইতালির কোয়ারেন্টিন থেকে এসেছেন। আসার পথে রোম, দুবাই এয়ারপোর্টে তাদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখানে আসার পর আমরা করলাম। তারপর আশকোনায় করা হবে। তারপরেও ১৪দিন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এর আগে শনিবার সকালে ইতালি থেকে আসেন আরও ১৪২ জন। পরে রাতে আরও দুটি ফ্লাইটে ৩১ জন ও ৫৮ জন আসেন। তাদের সবাইকে আশকোনা এবং গাজীপুরের পুবাইলের মেঘডুবি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছিলো। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাদের আশাকোনার হাজীক্যাম্পে নিয়ে গেলে সেখানে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে হাজীক্যাম্পে আরেক দফা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হোমকোয়ারেন্টিনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। যদিও আশকোনা হাজীক্যাম্পে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলা হয়েছিলো। ওইদিন রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শনিবার ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাই তাদেরকে বলেছি চাইলে তারা বাড়ি যেতে পারবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকও বলেছেন, জার্মানি ও ইতালি থেকে আসা দেড়শ জনকে আশাকোনা হাজীক্যাম্পে রাখা হয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে তারা সুস্থ্য আছেন। ইতালি থেকেই তারা সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছেন। পুলিশ স্কটের মাধ্যমে তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের তিনজন ইতালি ও একজন জার্মানি থেকে ফিরেছেন। এছাড়া ইতালি ফেরত একজনের মাধ্যমে তার পরিবারের একজন আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ইতালি সরকার জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এদিকে আশকোনার হাজীক্যাম্পের কোয়ারেন্টিনে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যে যাত্রীদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ইতালি ফেরত যাত্রীরা। বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ শেষে বিমানবন্দরে লম্বা লাইন ধরে সীমিত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে তাদেরকে পাঠানো হচ্ছে আশকোনা হাজীক্যাম্পে। সেখানে নিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখানে যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রুম বরাদ্দ নাই। ক্লান্ত শরীর নিয়ে চাইলেই কেউ বিশ্রাম নিতে পারছে না। খাবারের মানও ভালো না। ঠিকমত নাস্তা দেয়া হচ্ছে না। নাই পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা। নিম্নমানের খাবার সেখানে দেয়া হচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আশকোনার কোয়ারেন্টিনে ইতালি বা অন্য দেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে খাবার পানি ও নাস্তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যাত্রীরা সেখানে ভালোভাবে থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, আশাকোনা হাজীক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করছেন ইতালি ফেরত এসব যাত্রীদের স্বজনরা। অনেক স্বজনরা এসেছেন ইতালি থেকে আসা এসব যাত্রীদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তারা সেটি পারছেন না। এমনকি স্বজনরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেনা। অনেক স্বজনরা বলছেন, আশকোনা হাজীক্যাম্পের চেয়ে বাসায় নিয়ে আরও ভালো আইসোলেশনে তারা রাখবেন। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তারা নিয়ে যাবেন।