দুর্ঘটনার দায় শুধু চালকের নয়-

0

আবারো বলতে হচ্ছে- সড়কে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার যেসব খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে, হিসাব করলে দেখা যায় তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমপে পঁচিশ। সব খবরই সংবাদপত্রে আসে না। অবস্থাদৃষ্টে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, চালকদের বেপরোয়াভাবের কারণেই নিত্য প্রাণ যাচ্ছে যাত্রী ও পথচারীর। বিগত দুই মাসে দেশে ৭৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২৭ জনের নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। এটি গভীর উদ্বেগের। অধুনা গাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে মানুষ পুড়ে মরার ভয়াবহ দুঃসংবাদ ও পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য আবারও অযোগ্য অদক্ষ চালককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অবৈধ অবৈধ, অপরিণত, অযোগ্য চালকদের হাতে গণপরিবহনের চাবি তথা মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেয় কে? জেনেবুঝেই এই কাজটি করে থাকে পরিবহন মালিক এবং বিআরটিএর এক শ্রেণীর দায়িত্বহীন অসাধু কর্মকর্তা। তাই বলা চলে কোন সড়ক দুর্ঘটনা, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও মানুষ হত্যার পেছনের মূল হোতা তারাই। অথচ ঘটনা ঘটলে শাস্তি পায় কেবল চালক। ওই দুই শ্রেণীর ব্যক্তিরা নয় নেপথ্যের অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান। শাস্তির রায় অবশ্যই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বেপরোয়া চালকদের কাছে একটি বড় ধরনের সতর্কবার্তা পৌঁছে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা দরকার বেপরোয়া চালকদের পাশাপাশি মালিক ও রুট পারমিট দেয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা। পরিবহন খাতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার নেপথ্যের মূল কারিগর পরিবহন মালিক ও অসাধু কর্মকর্তারা যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি কোনদিন হবে না।
সড়কে কোন যানবাহন নামানোর আগে প্রাথমিক কিছু শর্ত থাকে। যানটি যথাযথভাবে নিবন্ধিত কিনা, তার ফিটনেস সনদ আছে কিনাÑ সেটি সবার আগে দেখার বিষয়। এর পরই রয়েছে চালকের সুস্থতা ও সনদের বিষয়টি। গণপরিবহনের েেত্র বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে বহু মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। প্রত্যেকেরই জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চাই। সড়কে আইন না মেনে চললে একটি মোটরযান ভয়ঙ্কর দানব ও হন্তারক হয়ে উঠতে পারে। তার হাজার হাজার দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের চোখের সামনে। গত বছর ঘোষিত নতুন সড়ক পরিবহন আইনে আইন ভাঙ্গার জন্য শাস্তি ও জরিমানা যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। এতে কেবল চালক-চালকের সহকারী বা যানবাহনের মালিকই নয়, পথচারীর জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে নতুন আইনে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদণ্ড। আসামির জামিন হবে না। এটি চালকের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখবে এবং তাকে দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়। চালক সতর্ক থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। আর নতুন আইন কার্যকর হলে এই সতর্কতা বাড়ানোয় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। সব পরে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতাই পারে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে। অহেতুক সড়ক দুর্ঘটনা শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য চাই সব পরে সহনশীলতা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা।