মুন্না হত্যাকাণ্ড : কিলারদের ধরতে মাঠে ডিবি পুলিশ,আটকের দাবি গডফাদারকে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বড়বাজার মাছ বাজার এলাকায় আড়ত কর্মচারী শেখ ইমরান হোসেন মুন্না হত্যাকান্ডের ১২ দিন পার হয়ে গেলেও জড়িত দুর্বৃত্তদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে সদর ফাঁড়ি পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও খুনিদের আটকে মাঠে নেমেছে। অপরদিকে ওই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে বড় বাজার কেন্দ্রীক একজন গডফাদারের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাজার এলাকায় তার সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের প্রভাব অটুট রাখতে তারই মদদে মুন্না হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এমন অভিযোগ বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর। তাদের ভাষ্য, ওই গডফাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের রহস্য উদঘাটন এবং কিলারদের ধরা সম্ভব হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, বড়বাজার, মাছ বাজার ও কাঁচা বাজার এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে ওই গডফাদার কয়েকটি সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং লালন করছেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি কাঁচা বাজারে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসী হোসেন আলী তুচ্ছ ঘটনায় লোহার হুক দিয়ে অপর শ্রমিক জাকির হোসেনের মাথায় আঘাত করে। এ সময় হোসেন আলীর সাথে ছিলো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য চিহ্নিত সন্ত্রাসী পলাশ। পরে বাজারের ব্যবসায়ীরা পলাশ ও হোসেন আলীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিন্তু বাজারের কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী নিজেরা মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে তাদেরকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনেন। যারা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য মীমাংসার কাগজে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন বাজারের ইজারাদার মীর মোশারেফ হোসেন বাবু। সূত্র জানায়, ওইদিন গোলাযোগের সময় ব্যবসায়ীদের ধাওয়া খেয়ে মুন্নার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো সন্ত্রাসী পলাশ। এমনিতেই মুন্নাকে অপছন্দ করতো পলাশ। ফলে ধাক্কা খাওয়ার পর ধরা পড়ায় মুন্নার ওপর তার রাগ বেড়ে যায়। এ জন্য পলাশ তাকে প্রায়ই হুমকি ধামকি দিতো। খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে হুমকির বিষয়টি মুন্না তার চাচাতো ভাই পৌর কাউন্সিলর রাশেদ আব্বাস রাজকে জানিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে মুন্না চায়ের অর্ডার দিয়ে মাছ বাজার এলাকার আদমের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসী পলাশের নেতৃত্বে শিমুল, রাকিব ও ছোট হৃদয়সহ আরো কয়েকজন সেখানে গিয়ে আচমকা তার ওপর হামলা চালায়। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে মারা যান মুন্না। সূত্র আরো জানায়, সন্ত্রাসীরা মুন্নাকে খুনের পর বাজারের কয়েকটি গলি হয়ে ঘোপের দিকে পালিয়ে যায়। তবে পালানোর সময় বাজারের একটি গলির ভেতর পড়ে গিয়েছিলো রাকিব ও ছোট হৃদয়। তাদের হাত থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিও পড়ে যায় এ সময়। কিন্তু তারা দ্রুত ছুরি তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘোপের দিকে পালিয়ে যাবার পর রাতে সন্ত্রাসীদের মধ্যে শিমুল কাঠেরপুল এলাকায় তার মা শিউলীর বাড়িতে আসে। কিন্তু সেখানেও সে বেশিক্ষণ ছিলো না। ওই রাতেই সেখান থেকে সে বাহাদুরপুরে খালা শিল্পীর বাড়িতে চলে যায়। সূত্র আরো জানায়, মুন্না খুনের পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘোপ এলাকায় ৪ কিলারকে রিকশায় দেখেছেন অনেকে। ঘোপে কিলার পলাশের এক ভাই থাকেন। ভাইয়ের বাড়িতে একসময় থাকতো পলাশ। কিন্তু তার কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তার ভাই। এরপর পলাশ সহযোগী শিমুলের নানি ছাকিরন বিবির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। অপর একটি সূত্র জানায়, মুন্না খুন হওয়ার পর ওই সন্ত্রাসীদের গডফাদার গা ঢাকা দেন। তবে হত্যা পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। শুধু তাই নয়, বাজার এলাকায় সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের প্রভাব অটুট রাখতে তারই ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা মুন্নাকে খুন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বাজার কেন্দ্রীক ওই গডফাদার নয়, এই সন্ত্রাসীদের সাথে সুবিধাবাদী অনেকের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। এদের দুজন হচ্ছে রাব্বি ও সঙ্গীত। রাব্বি বাজার এলাকায় ইজাদারের পোষ্য গুন্ডা হিসেবে পরিচিত। বাজারের মুরগিপট্টিতে প্রায় সময় তাকে অবস্থান করতে দেখা যায়। গডফাদার ছাড়াও রাব্বি ও সঙ্গীতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুন্না হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং কিলারদের আটক করা সম্ভব বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। এদিকে যোগাযোগ করা হলে নিহত শেখ ইমরান হোসেন মুন্নার চাচাতো ভাই পৌর কাউন্সিরল রাশেদ আব্বাস রাজ জানান, তারা পুলিশের কাছে খুনিদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন। মুন্না খুনের দুদিন পর তিনিসহ কয়েকজন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের সাথে দেখা করেছিলেন। এ সময় পুলিশ সুপার তাদের মামলার আসামিদের আটকে আশ্বাস দিয়েছেন। বড় মাছ বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনও মুন্না খুনের সাথে জড়িতদের আটকের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা নিরীহ ব্যবসায়ী। সন্ত্রাসীরা মুন্নাকে খুনের পর তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অপরদিকে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, শুধু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়, আসামিদের আটকের জন্য ডিবি পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে। বাজারের কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তাদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তাদেরও রেহাই মিলবে না। অন্যদিকে আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার আদালতে আত্মসমর্পণকারী ছোট হৃদয়ের রিমান্ড নামঞ্জুর হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে তার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন।