রামপালে জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলিতে তিন মাসেই ফাটল

0

এম. এ. সবুর রানা (রামপাল) বাগেরহাট ॥ রমেশ মন্ডল (৪৫) বাস করেন উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের ছোট সন্যাসী গ্রামে। তার পেটের নাড়িতে প্যাচ লাগায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পেটের ভেতর থেকে মলত্যাগের জন্য নল সংযোজন করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার ছোট্ট একখণ্ড জমি আছে। কিশোর বয়সের একটি মাত্র ছেলে। সংসারের ঘানি টানছেন স্ত্রী শুকলা মন্ডল। স্বামী-সন্তানকে বাঁচাতে মোংলা ইপিজেডে শ্রমিকের কাজ করেন। জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় তাকে দুর্যোগ সহনশীল একটি সেমিপাকা ঘর দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ওই ঘর নিতে তাকে পরিবহন বাবদ গুণতে হয়েছে ৩৫ হাজার ৫ শ টাকা। এছাড়াও মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, তাকে দেয়া ঘরে লাগানো হয়েছে নিম্নœমানের কাঠ। ইট ও বালি বাবদ নেয়া হয়েছে ১৫ শ টাকা। একইভাবে উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের চাড়াখালী গ্রামের অসুস্থ আজাহার আলী শেখকে একটি ঘর করে দেয়া হয়েছে। ওই ঘরেও তাকে পরিবহন বাবদ গুণতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
মাত্র ৩ মাস পরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল। মেঝে ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ঘরে লাগানো নিম্নমানের কাঠ কোথাও কোথাও বেকে গেছে। আজাহারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম জানান, এই ঘর করতে তার পরিবহন বাবদ খরছ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমাগো সরকারিভাবে যে ঘর দিয়া হইচে তাতে থাকতি ভয় নাগতিছে। শুনলাম আমার খরচের টাহা ফেরত পাবো কিন্তু তা এহোনো পর্যন্ত পাইনেই। উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের ছায়রাবাদ গ্রামের আকরাম শেখের স্ত্রী আফরোজা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, এই ঘর কত্তি আমার নাগিচে ৪০ হাজার টাহা। কিছু কাঠ ও আমার দিয়া লাগিচে। পাইখানাডা এহোনো ঠিক করে দিইনেই। পাশ্ববর্তী বর্ণি গ্রামের ফিরোজ শেখের বিধবা স্ত্রী শিরিনা বেগম জানান, তাকেও পরিবহন খরচ দিতে হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। তার ছেলে পিয়ার আলী জানান, এখনও পর্যন্ত ঘরের কিছু কাজ করতে বাকি রয়েছে। এভাবে হুড়কা ইউনিয়নের ছিদামখালী গ্রামের অজয় মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। ঘরের মালামাল পরিবহন, মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় ২২টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পালের আশ্বাসের পরও কোন সুফল মেলেনি। গ্রামীণ অবকাঠামো (টিআর) রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলের হতদরিদ্রদের মাঝে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এ ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে গৃহহীনদের অনেকেই এই ঘর পাননি। যারা পেয়েছেন তাদের গুণতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, মাত্র ৩ মাসে ঘরে ফাটল ধরার কথা না। আমাকে কিছু ছবি দেন আমি দেখি। যাচাই-বাছাই করে অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল জানান, যাদের ঘরে ফাটল ধরেছে তারা অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ পরিবহন খরচ দেখিয়ে টাকা নিয়ে থাকলে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুন উর রশিদের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনিয়মের বিষয়গুলি আমার জানা নেই। নির্দিষ্ট তথ্য পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।