চীনের করোনাভাইরাসে সর্বাধিক মূল্য দেবে কি ভিয়েতনাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি না ঘটলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির অর্থনীতির ব্যাপক হানী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির কলকারখানাগুলো ভয়াবহরকম কাঁচামাল সঙ্কটে পড়েছে। যেখানে ভিয়েতনামের মোট আমদানির ৩০ শতাংশই আসে প্রতিবেশী চীন থেকে। আর এর বেশিরভাগই শিল্পখাতের কাঁচামাল।
হ্যানয়ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেকং ইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম ম্যাককার্টি বলেন, ভিয়েতনাম অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে চীনের মতো নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পর্যটক একেবারে নগণ্য, সেই সঙ্গে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চাহিদায় পতন এবং চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ শতাংশ শ্রমিক বেকার।
গত বছরের শেষ নাগাদ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ভিয়েতনাম বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শহরে নতুন চান্দ্রবর্ষের ছুটি বর্ধিতকরণ, উত্তর সীমান্তে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করা অন্যতম। গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি চেকপয়েন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। যদিও চীন ফেরত ট্রাক চালকদের হাতমোজা, মুখোশ পরা বাধ্যতামূলক, সেই সঙ্গে গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভিয়েতনাম রেলওয়ে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৯ দিনে তাদের রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ লাখ ডলার কম হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ৪০ হাজার টিকিটের টাকা তাদের ফেরত দিতে হয়েছে।
হাজার হাজার চীনা অভিবাসী কর্মী ছুটি শেষে ভিয়েতনামে ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চীন সীমান্ত সংলগ্ন সান লই শহরেই রাখা হয়েছে ১০ হাজার কর্মীকে। সীমান্তের চেকপয়েন্ট খুলে দেয়া হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়নি।
থাহন হোয়া প্রদেশের একটি জুতা কারখানা ছুটির পর চালু হলেও প্রায় ১২ হাজার শ্রমিককে গত সপ্তাহে দুই দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে, কারণ তাদের কাছে যথেষ্ট কাঁচামাল নেই।
নানা সতর্কতার পরও ভিয়েতনামজুড়ে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ করেছে। তাদের আশঙ্কা, চীনা সহকর্মীরা দেশে ছুটি কাটিয়ে সঙ্গে করে করোনাভাইরাস নিয়ে এসেছে! অবশেষে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত একটি ট্রেড ইউনিয়ন তাদের আশ্বস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিনামূল্যে মুখোশ বিতরণ ও সংক্রমণ এড়াতে করণীয় বিষয়ে তাদের নানা তথ্য ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
লন্ডনের সোয়াস ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রম ও উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জো বাকলি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পোশাক ও জুতা কারখানার মালিকরা। এখানে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়ার কারণে। স্যামসাং বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো না হয় বিধিনিষেধ এড়িয়ে আকাশপথে মালামাল আনছে কিন্তু অন্যদের কাঁচামালের মজুদ শেষ হওয়ার পথে।
গত ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান সরবরাহ সঙ্কটে পড়ার কথা বলছে। যেখানে ভিয়েতনামের আমদানির প্রায় ৩০ শতাংশই আসে চীন থেকে। ফলে দেশটির কারখানাগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
এছাড়া এ বছর পর্যটন মৌসুমে ৫৯০ থেকে ৭৭০ কোটি ডলার লোকসানের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। অন্তত ২০ লাখ চীনা পর্যটক কম আসার কারণে দেশটির পর্যটন শিল্পের রাজস্ব ১৮০ থেকে ২০০ কোটি ডলার কমতে পারে। ভিয়েতনামের পর্যটন খাতের বৃহত্তম ভোক্তা চীনা নাগরিকরা। প্রতি বছর চীনা চান্দ্রবর্ষের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক চীনা দেশটি ভ্রমণ করেন। গত বছর এ দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ পর্যটক এসেছিলেন, এর এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন চীনা।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী গুয়েন সুয়ান ফু চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সরকারি লক্ষ্যের (৬.৮%) এক শতাংশীয় পয়েন্ট কম হবে।