খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র এক হয়ে দাঁড়িয়েছে : ব্যারিস্টার মওদুদ

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র এক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে এখন যে একদলীয় শাসন চলছে তার পরিবর্তে সবাই জনগণের সরকার দেখতে চায়। সেই সরকার আনতে হলে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর সেজন্য দরকার রাজপথের আন্দোলন। রোববার সন্ধ্যায় যশোরে সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারত শেষে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার মুক্তি মিলছে না। দেশে যদি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ থাকতো তাহলে বেগম জিয়ার জামিন অনেক আগেই হয়ে যেত।
২০১৭ সালে নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির দায়ের করা একটি মামলায় হাজিরা দিতে সকালে তিনি সেখানে যান। আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি যশোরে আসেন। এ মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা প্রেসকাবে একটি অনুষ্ঠানে মাহামুদুর রহমানের বক্তব্য শেষে করতালি দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। করতালি দিলে যে একটি ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে এটা আমাদের কোন আইনে নাই। এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। তারপরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি ঢাকা থেকে নড়াইল আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলাম। মওদুদ আহমদ বলেন, একটি সাজানো, প্রহসণের মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে জেল দেওয়া হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশের কোনো আদালতে এ ধরনের মামলায় কারো সাজা হওয়ার কথা নয়। অথচ শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তাকে বিনাদোষে কারাবরণ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমরা আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে আসছি। আদালতে নানা যুক্তি ধরে আসছি। অথচ কোনোভাবেই তাকে মুক্তি দিতে চাচ্ছে না সরকার। এজন্য আমাদের নেতাকর্মীরা এখন রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের প্রত্যাশা করছেন। আন্দোলনই এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র উপায়। মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা শুধু নয়, দেশের লাখ লাখ মানুষ এখন এ সরকারের দুঃশাসনের শিকার। আমি আজ নড়াইলের আদালত থেকেও একটি মিথ্যা মামলায় হাজির হয়ে জামিন নিয়েছি। করতালি দিলেও সরকার ফৌজদারি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জাতীয় প্রেস কাবের একটি প্রোগ্রামে আমি প্রধান অতিথি ছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য আমার ভালো লেগেছিলো। আমি তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে করতালি দিয়েছিলাম। আমি কেনো করতালি দিলাম, কেনো উৎসাহিত করলাম এজন্য আমার নামে আদালতে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হলো। সেই মামলায় আমাকে ঢাকা থেকে এসে আজ জামিন নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, এ থেকে প্রমাণ হয় দেশের মানুষ আজ কতটা খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। তাই এ অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হলে আগে গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়াকে মুক্তি করতে আন্দোলনে নামতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কখন এক দফার আন্দোলনে যাবে তা এখন বলা যাবে না। সময় হলে সব বুঝতে পারবেন।
কবর জিয়ারত শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে তিনি যশোর বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ, আলহাজ আনিসুর রহমান মুকুল, রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম.এ গফুর, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যশোর ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোর্ত্তজা ছোট, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হায়দার রানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নেওয়াজ ইমরান, তানভীর রায়হান তুহিন, আবুল কালাম আজাদ, বেনজির বিশ্বাস প্রমুখ।নড়াইলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম,সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জহুরুল হক কামাল, মো. ওয়াহিদুজ্জামান, বাহার কালান্দার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ,যুবদলের জেলা সভাপতি মো. মশিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক সায়দাত কবীর রুবেল,কৃষকদল নেতা মো. নবীর হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফসিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহমুদুল হাসান সানি প্রমুখ। এর আগে সকালে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির একটি মামলায় জামিন নিতে নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে যান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নীলুফার শিরিন ওই মামলায় জামিন দেন তাকে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের পক্ষে আদালতে জামিন চান সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ,অ্যাডভোকেট আব্দুল হকসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস কাবে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ওই অনুষ্ঠানে অধুনালুপ্ত ‘দৈনিক আমার দেশের’ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্ম্পকে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দেন। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে কয়েক শ বিএনপির নেতাকর্মী আদালত চত্বরে উপস্থিত হন।