কৃষকের তালিকায় মৃত ব্যক্তি, রিকশাচালক, দোকানদার!

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ মাগুরার শ্রীপুরে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন সিন্ডিকেট করে প্রকৃত আমন চাষিদের বাদ দিয়ে কৃষক তালিকা তৈরি করেছেন। মৃত, ভূমিহীন, দোকানদার, রিকশা ও ভ্যান চালক, ভূমিহীন এমন ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদাম কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রান্তিক চাষিদের কথা বিবেচনা করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি আমন ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মৌসুমে মাগুরার শ্রীপুর থেকে ১৩০৩ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এজন্য কৃষকের তালিকা তৈরির জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর লটারির আয়োজন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সেই লটারি না মেনে তাদের মতো করে তালিকা তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, মূল তালিকায় শ্রীপুর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ১১০৪ জন কৃষকের নাম রয়েছে। যেখানে আমতৈল গ্রামের বদর উদ্দিন মোল্লার ছেলে মালেক মোল্লা নাম রয়েছে। যিনি ৪ বছর আগে মারা গেছেন। নাম রয়েছে একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী খবির হোসেনের। তিনি ১০ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে আছেন। ওই এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। এমনিভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমিহীন, দোকানদার, রিকশা ও ভ্যানচালক, ভূমিহীন, কৃষক নয় এমন অসংখ্য মানুষের নামের বিপরীতে ধানের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা সিন্ডিকেট করে এ কাজটি করেছে।
শ্রীপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতিমণ আমন ধান ৬০০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার সেখানে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিমণ ধান একহাজার ৪০ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক কৃষকরা সেই সুবিধা থেকে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছেন। গুদামের গেট থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ গুদাম পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আর্দ্রতার কথা বলে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, গুদাম নিয়ন্ত্রণ করছেন সিরাজুল ইসলাম টোকন মেম্বার। তার সঙ্গে থাকেন গয়েশপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মন্নু মিয়াসহ বেশকিছু নেতাকর্মী। তারা কোনোভাবেই ধান নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এসব বিষয়ে গুদাম কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিছু হয় না। তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানজিলুর রহমান ও গুদাম কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তানজিলুর রহমান বলেন, ‘এখানে কোনও সিন্ডিকেট নেই। নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকেই ধান কেনা হচ্ছে। আর দ্রুত গুদামজাত করার স্বার্থে পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য কৃষকদের সরকারি বস্তা দেওয়া হলেও কোনও ব্যবসায়ীকে দেওয়া হচ্ছে না।’ ইয়াছিন কবীর বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নাম নির্বাচনের পর লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকায় মৃত, প্রবাসী কিংবা কৃষক নয় এমন ব্যক্তিদের নাম থাকার কথা নয়। তাছাড়া নির্বাচিত কৃষকরা ধান দিতে পারছেন না এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।