হত্যা ও বিস্ফোরকসহ ১০ মামলার আসামি আলোচিত টাক মিলনের রিমান্ডের আবেদন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বহুল আলোচিত টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ ও সোহাগ খুনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করেছে ডিবি পুলিশ। এ সময় আদালতে সোহাগ হত্যা মামলায় তার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। যুবলীগের বহুল আলোচিত এই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পরে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ডিবি পুলিশ তাকে আটক করায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ায় নিজ বাড়ির কাছে নির্মমভাবে খুন হন শরিফুল ইসলাম সোহাগ নামে এক যুবক। এই হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড যুবলীগ নেতা টাক মিলন। সোহাগ খুনের সময় টাক মিলন ঘটনাস্থলে উপস্থিতও ছিলেন। প্রায় দু মাস আগে তারা সোহাগ খুনের সাথে জড়িত আকাশ নামে এক সন্ত্রাসীকে আটক করেন। আকাশের বাড়ি কাজীপাড়া গোলামপট্টিতে। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে টাক মিলনকে সোহাগ খুনের মাস্টারমাইন্ড এবং তার উপস্থিতিতে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করে। সেই থেকে টাক মিলন পলাতক ছিলেন। এরপর গত ১২ জানুয়ারি রোববার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে তিনি আটক হন। এ সময় টাক মিলন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফাইটে করে দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, সোহাগ হত্যা মামলায় টাক মিলনকে মঙ্গলবার তারা আদালতে সোপর্দ করেছেন। এছাড়া এ হত্যাকা-ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের কাজীপাড়ার বাড়িতে বোমা হামলার সাথে আটক টাক মিলন জড়িত। মামলার তদন্তে তার নাম পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি গভীর রাতে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছিলো প্রতিপক্ষরা। সূত্রটি আরো জানায়, টাক মিলনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বহু অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যশোর জেলার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি (ট্রাক, অটোরিকশা ও বাড়ি নির্মাণে), ভূমি দখল, সন্ত্রাস ও গুপ্ত হত্যা।
পুলিশ জানায়, শহরের পুরাতন কসবা মানিকতলার রুস্তম আলীর ছেলে টাক মিলন হত্যা ও বিস্ফোরকসহ ১০ মামলার আসামি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে শুধু বিস্ফোরকের মামলাই রয়েছে ৪টি। সূত্র জানায়, আটক টাক মিলনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলার ওয়ারেন্টও রয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের (কোতয়ালি থানার মামলা নং-৪৮) একটি বিস্ফোরক মামলা, ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের (কোতয়ালি থানার মামলা নং-১১৩) একটি বিস্ফোরক মামলা এবং ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসের (কোতয়ালি থানার মামলা নং-১৩) আরো একটি বিস্ফোরক মামলা উল্লেখযোগ্য। একাধিক সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা টাক মিলন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান গ্রুপের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। পালবাড়ি এলাকার ইজিবাইক সিন্ডিকেট তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। পুরাতন কসবার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পালবাড়ির রয়েল কমিউনিটি সেন্টারের এক সময়ের বহুল আলোচিত ওয়ান টেন জুয়ার আসরও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন দফতরে টেন্ডারবাজির অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া তিনি পুরাতন কসবা এলাকার একাধিক খুন-খারাবির মাস্টারমাইন্ড বলে সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে বহুল আলোচিত টাক মিলন আটকের খবরে যশোরে গত সোমবার তার সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করতে চেয়েছিলো আওয়ামী লীগের একটি অংশ। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কড়া অবস্থানের কারণে মিছিলটি বের হতে পারেনি।