দুর্নীতির ভারে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড: পরীক্ষা না দিয়েই পাস

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ মো. সজিব মিয়া, ২০১৭ সালে কাপাসিয়া টেকনিক্যাল স্কুল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নবম শ্রেণির ছাত্র হিসেবে নিবন্ধিত (নম্বর ৮১৭৩৮৮) হয়। কিন্তু এই নিবন্ধন নম্বরে চলতি বছর (২০১৯) এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.০৪ পেয়ে যে পাস করেছে সে সবুজ মিয়া নয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর নাম রিপন হোসাইন। শুধু পরীক্ষার্থীই নয়, বাবা-মায়ের নামেও পরিবর্তন এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সবুজ মিয়া কোথায় গেলেন? যুগান্তর থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি দুষ্টচক্রের সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হলে একজনকে ছাত্র বানিয়ে দিচ্ছে। আবার পরীক্ষায় অংশ না নিলেও পাস করিয়ে দিচ্ছে যে কাউকে। মোটা অঙ্কের টাকা গুনলেই এভাবে পাস ও সনদ মেলে বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালের এসএসসি ভোকেশনালে কেবল উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানেই এমন অনেক শিক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে।
এ চক্রটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন সেমিস্টারে ফেল করা ৫৭৪ শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করিয়ে নম্বর দিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এমনকি মাঝপথে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জায়গায় নতুন ছাত্রছাত্রীদের নাম ঢুকিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে দিচ্ছে। অনুসন্ধানে এমন ১১টি কেস পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে ২৩ ডিসেম্বর বোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্লার অফিসে গেলে সাক্ষাৎ দেননি তিনি। কয়েক ঘণ্টা বসে থাকার পর বিকাল ৩টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সিঁড়িতে গিয়ে কথা বলতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এসব আজগুবি ও ভুয়া কথা নিয়ে আপনারা আসেন কেন। এরপর কথা বলতে বলতে গাড়ির কাছে গিয়ে মিটিং আছে বলে তিনি চলে যান। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বলেন, একটি বিষয়ে তদন্ত চলছে। কিন্তু কোনো বিষয়ে তা তার মনে নেই। পরে একইদিন বিকাল ৪টার দিকে বোর্ডের সচিব মাহাবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, সরাসরি এসএসসি পাস করানো বা শিক্ষাজীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে ভর্তি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা পাস করানো সংক্রান্ত একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি ওই কমিটির প্রধান। কমিটিতে আরও ৬ জন সদস্য আছেন। জানা গেছে, এতবড় ঘটনার অভিযোগ পেলেও চেয়ারম্যান তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগকে অবহিত করেননি। তবে অন্য একটি মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করেই নম্বর দেয়া সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছে বিভাগটি। সেটি মন্ত্রণালয়েরই এক অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে। এ বিষয়টিও চেয়ারম্যান জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ২৬ ডিসেম্বর কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ব্যাপারে একটি অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সরাসরি এসএসসি বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করানো বা ফেল শিক্ষার্থীকে পাস করানোর কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে তা তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, যে সিন্ডিকেট ‘ভুয়া’ শিক্ষার্থীদের এসএসসি বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করাতে কাজ করছে, তাতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খোদ কম্পিউটার সেল এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখার অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আছেন। জড়িত হিসেবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পাল, কম্পিউটার শাখার সিস্টেম অ্যানালিস্ট সামসুল আলমসহ অনেকেই জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বোর্ডের কম্পিউটার সেলের একজনের স্ত্রীর সঙ্গে চক্রের সদস্যরা যোগাযোগ রক্ষা করে। স্ত্রী মিরপুর এলাকার একটি বেসরকারি বিখ্যাত পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে গাড়িও উপহার নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। চক্রের বাকি সদস্যরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পালের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। পরিচয় না দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখার গেটে কর্তব্যরত সামসু নামের এক আনসার সদস্যের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘স্যার (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) বলেছেন যে, সাংবাদিক এলে ঢুকতে না দিতে।’ পরে দু’দিন ধরে মোবাইল ফোনে কল দিলে টেক্সট পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। পরিচয় দিয়ে তিনবার টেক্সট করার পরও তিনি ফোন ধরেননি। চতুর্থবারে আলাপের বিষয় উল্লেখ করে টেক্সট পাঠিয়ে পরে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। আর সিস্টেম অ্যানালিস্ট সামসুল আলম বলেন, কিছু দুষ্ট লোক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যেহেতু অভিযোগের ওপর তদন্ত চলছে, তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না। এর আগে ২০১৭ সালে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ধরা পড়ে। ওই ঘটনা তদন্ত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন ভূঞা ও তৎকালীন উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী। কমিটি ওই ঘটনায় ৫ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। ৫ জনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পালের নাম আছে। এ ব্যাপারে ২৪ ডিসেম্বর আলাপকালে জাকির হোসেন ভূঞা বলেন, ‘আমরা তদন্তে তখন বেশকিছু জালিয়াতি চিহ্নিত করেছিলাম। ওই ঘটনায় কয়েকজনকে শাস্তি দেয়া এবং পদ্ধতিগত ত্রুটি দূর করার সুপারিশ করি। পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো দূর করলে এখন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার কথা নয়।’
যেভাবে জালিয়াতি : ভুয়া শিক্ষার্থীকে এসএসসি পাস করাতে রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতির আশ্রয় নেয় চক্রটি। তারা নবম শ্রেণিতে ভুয়া-নাম ঠিকানায় কিছু শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করে রাখে। শিক্ষার্থী না থাকলেও ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো বোর্ড পরীক্ষা মোকাবেলা করেই রহস্যজনকভাবে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণও হয়। দুই বছর পর পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে রাতারাতি সেই সব নাম-ঠিকানা পাল্টে যায়। এছাড়া আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে- দশম শ্রেণিতে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের স্থলে আরেকজনকে ‘রিপ্লেস’ করা হয়ে থাকে। নবম শ্রেণিতে ছিল এক নাম পরে দশমে আরেক নামে পরীক্ষা দেয়ার কিছু রেজিস্ট্রেশন নম্বর হচ্ছে- ৮১৭৩৮২, ৮১৭৩৮৮, ৮১৭৪০৫, ৮১৭৪০৪, ৮১৭৪০৩। এখন পর্যন্ত পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান (কোড : ৫৩০৯৫) থেকেই উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরা সবাই চলতি বছর (২০১৯) এসএসসি পাস করেছে। ঢাকাসহ সারা দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য যুগান্তরের কাছে এসেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করলে সবকিছু প্রমাণ মিলে যাবে বলে জানিয়েছে সূত্র। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বা ৬ষ্ঠ পর্বে গিয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর ঠিক থাকে। কেবল পাল্টে যায় শিক্ষার্থী এবং তাদের বাবা-মায়ের নাম। কোনো কারণে যদি নাম পাল্টানো না যায়, তবে তা বহাল রেখেই পরীক্ষা শেষ করা হয়। পরে সংশোধনের আবেদন দিয়ে পাল্টানো হয় নাম।
অনুসন্ধানে এমন কিছু রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে আছে, ৬২৬৬০০ (সেশন ২০১৩-২০১৪) ও ৭৩০৪৯৯ (১৪-১৫)। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এই নম্বরে শিক্ষার্থী নতুন যুক্ত হয়েছে সেটির কোড হচ্ছে ৫৩০৮২। এছাড়া ৮৩৮৭৪৩, ৮৩১৩১৭, ৮২৮০১১, ৮২৭৯১১, ৮২৪২৭২ রেজিস্ট্রেশন নম্বরধারীর নাম-পিতামাতার নামও পাল্টে অন্য শিক্ষার্থীকে রিপ্লেস করা হয়েছে। এরা সবাই ২০১৭-২০১৮ সেশনের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী। ডিপ্লোমা-ইন-নার্সিংয়েও এমন তিনটি রিপ্লেস কেসের তথ্য পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো হচ্ছে- ৮৯৩৩৯৪, ৮৯৩১৮২ এবং ৮৯৩১৯৪। এগুলো সবই ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের। ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এসেছে যেখানে এভাবে এক শিক্ষার্থীর পরিবর্তে আরেকজনকে রিপ্লেস করে ডিগ্রি দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ আছে ৩৬০ ঘণ্টার বেসিক কোর্সেও একই ধরনের জালিয়াতি আছে। ২০১৯ সালের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। ওই ফল প্রকাশে ব্যাপকভাবে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের রেজাল্টও আসেনি। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের রোলও প্রকাশ পায়নি। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নানাভাবে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে ৩ ডিসেম্বর সারারাত কম্পিউটার সেলে চক্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অবস্থান করেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের উত্তরপত্রের নম্বর সংশ্লিষ্ট লিথো কোডের নথিপত্রও বিক্রির পাঁয়তারা চলছে। এছাড়া ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের শিক্ষকদের নিয়ে ওই কর্মকর্তা বোর্ডেই নিজের রুমে মিটিং করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিস্টেম অ্যানালিস্ট সামসুল আলম বলেন, বোর্ডে বছরে ৭৯টি পরীক্ষা নিতে হয়। তাই বহু কাজ পেন্ডিং থাকে যা রাতেও করতে হয়। ওই সময়ে (৩ ডিসেম্বর) মেডিকেলের পরীক্ষার কাজ ছিল বলে সারারাত থেকে করতে হয়েছে।
ফেল-পাসের কারবার : সূত্র জানায়, এসএসসি, এইচএসসি এবং ডিপ্লোমায় খারাপ পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদেরও পাস করানোর ব্যবস্থা রেখেছে সিন্ডিকেট। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন শিক্ষক নামে দালালরা ছাত্রছাত্রীদের কাছে থেকে বিষয় প্রতি মোটা অঙ্কের অর্থ নেয়। এর বিনিময়ে তাদের পাস করানোর দায়িত্ব নিয়ে থাকে ওই সব শিক্ষক। কেবল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরই এমন ৫৭৪টি কেস এসেছে যেগুলো ফেল করলেও পরে পাস করানো হয়েছে। এছাড়া উত্তরপত্র না দেখেই নম্বর দেয়ার অভিযোগও আছে। ১ ডিসেম্বর এমন একটি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। এর ভিত্তিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত সচিব বিল্লাল হোসেন বর্তমানে অভিযোগটি তদন্ত করছেন। ওই অভিযোগপত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে এইচএসসিতে (বিএম) ২ হাজার উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করেই ফল ঘোষণার কথা আছে। এতে জড়িত হিসেবে এক কলেজ অধ্যক্ষ এবং একজন পিয়নের নামের উল্লেখ আছে অভিযোগপত্রে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, তিনি একটি অভিযোগের ওপর তদন্ত করছেন। তদন্ত কাজ শেষ হয়নি।
কোন কাজে কত রেট : সূত্র জানায়, সরাসরি এসএসসি (ভোক ও দাখিল) এবং এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে দেয়ার মূল ব্যবসাটি করে থাকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এই কাজে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। আর সরাসরি ডিপ্লোমা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রতি ছাত্রছাত্রীর কাছে থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা করে নেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নামের দালালরা। আর বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পান ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়েও একটা বাণিজ্য আছে। নবম শ্রেণিতে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রেজিস্ট্রেশনের সময় সব সিট ফিলাপ করে রাখে। ফাইনাল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে অনেক ছাত্রছাত্রী সরাসরি (নবমের) ফাইনাল পরীক্ষা দিতে আসে। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১০-১২ হাজার টাকা নিয়ে নাম রিপ্লেস করা হয়। তখন এ ধরনের ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি নবমের ফাইনাল অংশ করে। এই কাজে বোর্ডের সিন্ডিকেট প্রতিটির জন্য ৭ হাজার টাকা করে নেন। আর এসএসসি, এইচএসসি এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে না পারা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রবেশপত্র দেয়ার বাণিজ্য আছে। এই কাজে প্রতিটির জন্য বোর্ডের সিন্ডিকেট ৫ হাজার টাকা করে নেয় বলে জানা গেছে। অপরদিকে এসএসসি, এইচএসসি এবং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় যেসব ছাত্রছাত্রী পাস করতে পারবে না বলে ধারণা করেন তাদেরও পাস করানোর ব্যবস্থা আছে বলে অভিযোগ আছে। এ কাজে প্রতি বিষয়ের জন্য ৫ হাজার টাকা করে নেন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরও কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি : সূত্র জানায়, ছাত্রছাত্রীদের হারিয়ে যাওয়া অ্যাডমিট বা রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডুপ্লিকেট পেতে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বোর্ডের নির্দিষ্ট ফরমেটে আবেদন করতে হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে কম্পিউটার শাখা থেকে সরাসরি প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে। এতে বোর্ডের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে একটি নিয়ম চালু করেছে, যেসব ছাত্রছাত্রী জেএসসি পাস করেনি তারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলে জন্মতারিখ ১৯৯৭ সালের পর হতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ১৯৯৭ সাল দিয়ে অনলাইনে ভর্তি করে। পরবর্তীকালে বয়স কমিয়ে নেন তারা। এই কাজটি করেও সংশ্লিষ্ট শাখার সিন্ডিকেট প্রতি বছরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।