‘বিদায়ী বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ছয় ভাগ’

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ সদ্য সমাপ্ত ২০১৯ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৫৯ শতাংশ এবং পণ্যমূল্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৬ শতাংশ এবং ৫.১৯ শতাংশ। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছে ক্যাব। অন্যদিকে, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ৭ বার এবং খুচরা মূল্য ৯ বারসহ মোট ১৬ বার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কর্তৃক আয়োজিত জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২০১৯ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সভাপতি গোলাম রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবার মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবার তথ্য পর্যালোচনা করে ক্যাব এই হিসাব করেছে। এসব পণ্য ও সেবা বাবদ একটি পরিবারের মোট ব্যয় তুলনা করে শহুরে জীবনযাত্রার ব্যয়ের হিসাব বের করেছে সংগঠনটি।
তবে এ হিসাবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত বাবদ যে ব্যয়, তা বাদ দেয়া হয়েছে বলছে ক্যাব।
ক্যাব জানায়, গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পিয়াজের। আগের বছরের তুলনায় দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৪৯.৫২ শতাংশ। আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ৭১.১১ শতাংশ। অন্যান্য মসলার মধ্যে এলাচের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ৩২.৪৭ থেকে ৪৪.৪১ শতাংশ। দেশি আদার দাম বেড়েছে ১২.০৪ শতাংশ এবং আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ১৬.০৬ শতাংশ। দেশে উৎপাদিত রসুনের দাম বেড়েছে ১২.৩৩ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৭.১৬ শতাংশ।
সংস্থাটি জানায়, ২০১৯ সালে গড়ে শাক-সবজির দাম বেড়েছে ৮.১৩ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ১০.৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া দেশি থান কাপড়, বিদেশি কাপড়, খেজুর গুড়, নারিকেল তেল, ঘরভাড়া প্রভৃতি জিনিসের দামও বেড়েছে। তবে ভোজ্যতেল, লবণ, চিনি, সাবান, পান সুপারি ইত্যাদি পণ্যের দাম কমেছে বলে জানায় ক্যাব।
এতে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিসমূহ ভোক্তাদের নিকট চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করা সত্ত্বেও উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয় সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না, এই অজুহাতে আবার মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিইআরসি ইতিমধ্যে পিডিবি ও বিতরণ কোম্পানি সমূহের আবেদনের বিষয়ে গণশুনানি করেছে। শুনানিতে ক্যাব প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধির ন্যায্যতা ও যুক্তিযুক্ততার মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্যর স্বপক্ষে তথ্য উপাত্ত এবং যুক্তি উপস্থাপন করেছে। ভোক্তাদের প্রত্যাশা বিইআরসি ক্যাবের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে মূল্য বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করবে অথবা মূল্যবৃদ্ধির আদেশে অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয় তা ব্যাখ্যা করবে।
ক্যাব জানায়, বিইআরসি ভোক্তাদের জন্য না ভেবে পক্ষপাতিত্ব করছে। উদ্যোক্তারা যাতে হতাশ না হয় এবং উৎসাহ পেয়ে আরো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয় সে বিষয়ে বিইআরসির যেমন লক্ষ্য রাখা উচিত, ঠিক তেমনি ভোক্তাদের যেন অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য করা উচিত। কিন্তু তারা সে বিষয়ে লক্ষ্য না রেখে দাম বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ক্যাব সভাপতি জানান, ২০১৯ সালে উচ্চবিত্তের বাড়ি ভাড়া কিছুটা কমলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়ায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বস্তির ঘর ভাড়া। ক্যাবের প্রতিবেদন বলছে, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮.১৮ শতাংশ, বস্তির ঘর ভাড়া বেড়েছে ৯.৭৪ এবং মেস রুমের ভাড়া ৭.৯১ শতাংশ বেড়েছে।