ঘটনাস্থলে ১৫ আলামত

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিমানবন্দরগামী সড়ক। কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক শ’ গজ দূরেই ঘটে ঘটনাটি। রাস্তার পাশে সৌন্দর্যবর্ধণ ফুলের গাছ। বড়ই, মেহগনি গাছ। পাশেই আর্মি গলফ ক্লাবের দেয়াল। দেয়ালে ঝুলে আছে লতাঘাস। এই সৌন্দর্যবর্ধণ ফুলগাছের আড়ালেই ঘটেছে কুৎসিত, পাশবিক ঘটনাটি। ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে অন্তত ১৫ ধরনের আলামত।
ধর্ষণের নীরব সাক্ষী ঘাসগুলো। সরজমিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাসগুলো ভেঙে গেছে। মাটিতে রয়েছে ধস্তাধাস্তির আলামত। ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে ছাত্রীর শরীরেও। মুখ চেপে জোর করে ঘাসের ওপরে ফেলে এখানে ধর্ষণ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে। পাশবিক নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে যান তরুণী। নির্যাতিতা তরুণীর বরাত দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, সময় তখন সন্ধ্যা ৭টা প্রায়। ঢাবি’র বাস ক্ষণিকা থেকে কুর্মিটোলা বাস্ট্যান্ডে নামেন। শেওড়া যাবেন বান্ধবীর বাসায়। সেখানেই রাতে থাকার কথা তার। ভুল করে একটু আগেই নেমে যান এখানে। নেমে হাঁটছিলেন তিনি। বুঝতে পারেননি কেউ তাকে অনুসরণ করছে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একজন পুরুষ বার বার তার নাম কি? কোথায় যাবেন জিজ্ঞাসা করছিল। এক পর্যায়ে শক্ত একটি হাত তার মুখ চেপে ধরে। অন্য হাতটি পেট বরাবর চেপে ধরে দ্রুত টেনে রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ের আড়ালে নিয়ে যায় তাকে। সেখানেই জোর করে ধর্ষণ করা হয়। ওই তরুণী জানান, ছেলেটি সুঠাম দেহী, শ্যামলা রঙের। বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। কোনোভাবেই পেরে উঠছিলেন না তিনি। কয়েক বার চিৎকার করেছেন। রাস্তায় তখন অনেক গাড়ি থাকলেও ফুটপাত তখন প্রায় নির্জন। চিৎকার করার চেষ্টা করতেই ছেলেটি তাকে প্রচন্ড মারধর করে। মেয়েটির সঙ্গে থাকা ফাইল, বই, প্যাড ছিড়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। টেনে মেয়েটির গ্যাবার্ডিনের কালো প্যান্ট খুলে নেয়। ধস্তাধাস্তি করতে গিয়ে মেয়েটির হাতের সাদা চেইনের ঘড়িটিও খুলে পড়ে সেখানে। ব্যাগ থেকে পড়ে যায় ইনহেলার। যা শ্বাসকষ্টের রোগী ওই মেয়েটির ওষুধ। ব্যাগ থেকে পড়ে যায় ঢাবি’র নিজ বিভাগের প্রসপেক্টাস, চাবির রিং, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ প্রয়োজনীয় আরও কিছু কাগজপত্র। পাওয়া যায় এক জোড়া স্যান্ডেল। ধর্ষণের এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যান তরুণী। প্রায় ১০ টার দিকে জ্ঞান ফিরে মেয়েটির। আশপাশে তখন কেউ নেই। ব্যাগে রাখা অন্য একটি প্যান্ট পড়ে ঝোপঝাড় থেকে বের হন। বান্ধবীর বাসায় থাকার উদ্দেশ্যেই প্যান্টটি সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি।
জানা গেছে, পরে পায়ে হেঁটে ওই বান্ধবীর বাসায় যান। ভাটারা এলাকা সংলগ্ন রেললাইনের পাশে বান্ধবীর বাসা। সেখান থেকে বান্ধবী তাকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেলে। রাত তখন প্রায় ১টা। পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ রাত ৩টার দিকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করেন বলে জানান তিনি।
গতকাল নির্যাতিতার ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এ বিষয়ে ঢামেক’র ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার গলায় চেপে ধরার চিহ্ন পাওয়া গেছে। নখের আচড় রয়েছে। এছাড়াও হাতে, পায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন আছে। কিছু আলামত ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ওই পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে মেয়েটি একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি-না। গতকাল ঢামেক হাসপাতালে গেলে কথা হয় নির্যাতিতার মামার সঙ্গে। তিনি জানান, তার ভাগ্নি রোকেয়া হলে থাকেন। সেখান থেকেই ওই দিন সন্ধ্যায় বান্ধবীর বাসার উদ্দেশ্যে ঢাবি’র দোতলা বাসযোগে কুর্মিটোলা পর্যন্ত যান। তারপরই এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে নির্যাতিতা ট্রমায় ভুগছেন। খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তার মা-বাবা ঢাকায় এসেছেন।
ধর্ষণের এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয়ে উঠে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। থানা পুলিশের পাশাপাশি এটি তদন্ত করছে র‌্যাব ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সকালে ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করেছে সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে কুর্মিটোলা, শেওড়া ও হাজী ক্যাম্প এলাকার বেশ কয়েকজন সন্দেভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সোর্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সূত্রমতে নির্যাতিতার মোবাইলফোন নিয়ে গেছে ধর্ষক। তদন্তে এ বিষয়টিকে গুরু্‌তব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। র?্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আলামত থেকে ধর্ষকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে ধর্ষকের সন্ধান পেতে র‌্যাব তৎপরতা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধর্ষক একজনই জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে ধর্ষক একজনই। গুলশান জোনের পুলিশের উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ধর্ষককে সনাক্ত করতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।