খাতুনগঞ্জ বাজারে বাড়ছে আদা-রসুনের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বছরের শুরুতেই অস্থির হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। তিন-চারদিন থেকে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মসলাপণ্য পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি ও চাহিদার চেয়ে কম আমদানির কারণে দেশীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য আমদানিকারকদের। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিকারকদের বাড়তি মুনাফা কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার।
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত ও পাইকারি দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন-চারদিনে অস্থির হয়েছে পেঁয়াজের বাজার। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের শেষ দিকে অর্থাৎ বুধবারও বাজারে একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০-১০০ টাকার মধ্যে। সেই হিসাবে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি কেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা পর্যন্ত।
একই ভাবে কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পাকিস্তানি ও হল্যান্ডের পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও চীনা পেঁয়াজ ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানি ও হল্যান্ডের পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকা ও চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০-৩৫ টাকায়।
পেঁয়াজের পাশাপাশি এদিকে গতকাল থেকে বাড়তে শুরু করেছে অন্য দুটি কাঁচাপণ্য আদা ও রসুনের দামও। মাত্র একদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত।
গতকাল খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চীনা আদা বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকায়। একদিন আগেও বাজারে একই মানের আদা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। সেই হিসাবে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত। একই সময়ে কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ছে আমদানীকৃত চীনা রসুনের বাজার। গতকাল পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার মধ্যে। একদিনের ব্যবধানে গতকাল একই রসুন বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী রাজন রড়ুয়া জানান, অস্থির বাজারে আমদানি বৃদ্ধির পর গত দু-তিন সপ্তাহ নিম্নমুখী ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় মসলাপণ্য পেঁয়াজের দাম। এ সময় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকার নিচে চলে আসে। কিন্তু গত বুধবার থেকে হঠাৎ পণ্যটির বাজার আবার বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে তিন-চারদিনে পণ্যটির দাম মানভেদে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে এ ব্যবসায়ী বলেন, অস্থির বাজারে মুনাফার উদ্দেশ্যে ভারতের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় সরবরাহ চাপে বাড়তি দামে আমদানি করা পেঁয়াজে লোকসান দিয়েছেন বহু ব্যবসায়ী। ফলে গত দু-তিন সপ্তাহ পেঁয়াজ আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে পণ্যটির আবারো সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী ও মেসার্স আলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাজারে আদা-রসুনের বাজার অস্থিতিশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বেশি থাকায় দেশের আমদানিকারকরা পণ্যটির আমদানি করেছেন কম। এতে বিভিন্ন সময় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্য দুটির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বর্তমানেও একই কারণে দাম বেড়েছে আদা ও রসুনের।
মসলাপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্যের আড়ত হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এটি ছিল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পেঁয়াজ আমদানির রেকর্ড। অন্যান্য দেশের মধ্যে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, হল্যান্ড ও মিসর থেকে এবার পেঁয়াজ আমদানি হলেও মিয়ানমারের পেঁয়াজের মান সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে পণ্য আমদানিতে কম সময় ব্যয় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। কিন্তু অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ আমদানি ও সরবরাহ বাড়লে মিয়ানমারের পেঁয়াজে লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ কারণে দু-তিন সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সরবরাহ সংকটে আবারো পণ্যটির দাম বেড়েছে।