“আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনালে খালেদা জিয়া নির্দোষ”

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ কানাডায় আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনাল নাইকো চুক্তি মামলায় যে রায় দিয়েছেন সেখানে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বলা হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নাইকো চুক্তিতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। এই মামলায় খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনাল। মামলায় অন্য যাদের জড়িত করা হয়েছে, তারাও নির্দোষ।’ শনিবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত কবীর মুরাদের স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়টি যেন জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়, সেজন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্টকে (আইসিএসআইডি) চাপ দিয়েছে সরকার। এই চাপ দেওয়ার কারণ হচ্ছে খালেদা জিয়াকে যে নির্দোষ বলে রায় দেওয়া হয়েছে, এটা যেন প্রকাশ করা না হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, তিন সদস্যের আইসিএসআইডির সালিশি ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন, মাইকেল ই. স্নাইডার (ট্রাইব্যুনালের সভাপতি, উভয়পক্ষের নিয়োগ), প্রফেসর ক্যাম্পবেল ম্যাকলাহান কিউসি (বাংলাদেশ পক্ষের নিয়োগ) এবং প্রফেসর আন পলসন (নাইকো পক্ষের নিয়োগ)। তারা সবাই বিদেশি। মির্জা ফখরুল বলেন, নাইকো দুর্নীতি মামলার মূল মামলা যেটা আন্তর্জাতিক আদালতে হয়েছে তা গোপন করে সরকার এ মামলা করেছে। এ মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে ইতোমধ্যে রায় হয়েছে। এই মামলার রায়ে বলা হয়েছে, নাইকো চুক্তিতে কোনও ধরনের দুর্নীতি হয়নি এবং খালেদা জিয়াসহ যাদের এ মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের আমি অনুরোধ করব, এই বিষয়টা সবাই একটু জানার চেষ্টা করবেন। আমি বলতে চাই−এখানে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়টি যেন জনসম্মুখে প্রকাশ না করা হয়, সেজন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্ট্রাল ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্টকে চাপ দিয়েছে সরকার। যেন খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বলে রায় দেওয়া হয়েছে সেটা প্রকাশ করা না হয়।’ বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে যারা বিচারক ছিলেন, তারা সবাই বিদেশি। আমাদের সরকারও সেখানে ছিল, তারা অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারকরা বলেছেন, নাইকো সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত এবং খালেদা জিয়ার এখানে কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের দুর্নীতির কোনও প্রমাণ তারা পাননি। এই ধরনের যতগুলো মামলা দেওয়া হয়েছে, সব মিথ্যা মামলা।
মির্জা ফখরুল আরও দাবি করেন, তারেক রহমানকে যেসব মামলায় জড়ানো হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। সরকার দীর্ঘ সময় ধরে তারেক রহমান এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমনটা বলে এলেও আজ পর্যন্ত তারা একটিও প্রমাণ করতে পারেনি। একটি মামলায় বিচারক তাকে নির্দোষ বলে রায় দেওয়ার কারণে ওই বিচারককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ করায়ত্ত করে রেখেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য এবং সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। আজকে বাংলাদেশ বলতে যে রাষ্ট্র, এই রাষ্ট্রে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যদি দেখেন তবে লক্ষ করবেন সবচেয়ে নিম্নমানের লোকজনকে শুধু রাজনৈতিক কারণে ভিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাস কোর্স, থার্ড ক্লাস পাওয়া লোকজনকে ভাইস-চ্যান্সেলর বানানো হচ্ছে। রাজনৈতিক ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে এখন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, বিসিএসে রিক্রুটমেন্ট করা হয়। এভাবে সব প্রতিষ্ঠানকে তারা নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য দলীয়করণ করছে।’ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটস’ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে। রায়ের পর কপি প্রকাশে বিলম্বের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতের যে প্রক্রিয়া, সেগুলো সম্পন্ন করতে সময় লাগায় রায়ের কপি পেতে বিলম্ব হয়েছে।’