ফুলের রাজ্যে চাষির মুখে হাসির ছটা

0

আকরামুজ্জামান ॥ ইংরেজি নববর্ষে প্রত্যাশা অনুযায়ি ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে যশোরের ঝিকরগাছার ফুল ব্যবসায়ী ও চাষিরা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর ফুল উৎপাদন, চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় সন্তুষ্টু তারা। গত কয়েক মাস ধরে নতুন নতুন প্রজাতির ফুল গাছ রোপন ও পরিচর্যার পর গদখালীর প্রতিটি ক্ষেত এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। তাই নববর্ষের আগ মুহূর্তে ফুল ক্ষেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুঁটে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
ফুল চাষিরা জানান, বছরের বিশেষ দিনগুলো উপলক্ষে সারাদেশে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অন্তত ৭০ শতাংশই যশোরে উৎপাদিত ফুল। প্রায় বছরজুড়ে ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত গদখালীতে ফুল বিক্রি হলেও মূলত ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে মূল মৌসুম শুরু হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুলের চাহিদা বেশি থাকলে পহেলা জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষে অন্যান্য জাতের ফুল বিক্রি হয় ব্যাপকহারে। ইংরেজি নববর্ষ আসার আগ মুহূর্তে শহর-নগরের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিতে গদখালীর ফুল চাষিরা প্রস্তুত থাকেন। তাই নববর্ষের ফুল নিতে গত ৫ দিন ধরে প্রতিদিন গদখালী ফুল বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন ফুল সংগ্রহ করতে। বাংলাদেশ ফাওয়ার সোসাইটির সভাপতি ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, চলতি বছরে প্রলয়ঙ্করী ঘুর্নিঝড় বুলবুলের কারণে ফুল চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেতের ফুল নষ্ট হয়ে যায়। কৃষক যখন বিশেষ দিনগুলোকে টার্গেট করে নতুন নতুন জাতের ফুল চাষ শুরু করেন তখন ঘুর্নিঝড় বুলবুলের কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে দ্বিতীয় দফা ফুলের চাষ শুরু করেন তারা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা। তিনি বলেন, গদখালির মাঠে প্রান্তে এখন শুধু ফুল আর ফুল। গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ বিভিন্ন ফুল তে। রঙ-বেরংয়ের ফুলের সমারহে গদখালি এলাকা অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি ফুল মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। একারণে চাষিরা সাধ্যমত ফুল চাষ করেছেন। ফাওয়ার সোসাইটির নেতা আব্দুর রহিম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি দেশে রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা না থাকায় মনে করা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা সঠিক সময়ে তাদের ফুল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে পারেন। সে হিসেবে নববর্ষ উপলক্ষে গদখালী থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটির ফুল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন।
পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি শাহাজান আলী বলেন, ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করা হয়েছে। তবে বিশেষ দিবসে অপূর্ব ফুল জারবেরা স্পেশাল গিফট হিসেবে গণ্য হচ্ছে সকলের কাছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় থেকে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দর্শনার্থী নারী-পুরুষরা ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন জারবেবা ফুল। তিনি বলেন, ক্ষেতের একেকটি জারবেরা ফুল ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গদখালীর ফুল বাজারের চেয়ে ক্ষেত থেকে বেশি জারবেরা ফুল বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরের ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল কেনার জন্য আমাদের কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন। গত রোববার থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা জেলায় কিছু ফুল সরবরাহ করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫ টি জেলাতে আমাদের উৎপাদিত ফুল পৌছে দেয়া হবে। তিনি বলেন, যশোর মূলত কৃষি অর্থনীতি নির্ভর। এখানে বছরে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। বিজয় দিবস, ভাষাশহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিবাহ, পূজা-পার্বনে গদখালীর চাষীরা ফুল বিক্রি করে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করে আসছেন। এবছর ফুলের চাহিদা ও দাম দুই-ই ভালো। গতবছর একটি গোলাপ দুই থেকে তিন টাকায় বিক্রি হলেও এবছর সেখানে ৬ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা, গ্লাডিউলাসও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন জানান। রোববার ভোরে বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাসের ছাদে স্তুপ করে ফুল সাজানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য। এসময় কথা খোরশেদ আলম নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি এসেছেন চট্রগ্রাম থেকে। তিনি বলেন, আড়াই লাখ টাকার ফুল কেনার টার্গেট রয়েছে। এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে রজনী গন্ধা, গ্লাডিউলাস, গোলাপ ও জারবেরা বেশি। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর ফুলের বাজার চড়া। তবে চাহিদা বেশি থাকায় আমরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছি। একই কথা বলেন, ময়মনসিংহের ফুল ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত তিনদিনে তিনি ৮০ হাজার টাকার ফুল কিনেছেন। এসব ফুল ঢাকার শাহাবাগের বাজার ধরার জন্য কেনা হয়েছে। রাতে পরিবহনের ছাদে করে ফুল নিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান। ফুল ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া থাকলে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ফুল বেচাকেনা চলবে।