বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে চীনের ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ উত্থান-পতনময় একটি বছর পার করেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ বাজারে নিম্ন চাহিদাসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছর আশানুরূপ প্রবৃদ্ধির দেখা পায়নি বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতিটি। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আগামী বছর থেকে নিজেদের ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক বাজার বিদেশীদের কাছে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং। খবর ব্লুমবার্গ।
নিজেদের ইন্স্যুরেন্স ও ফিউচার মার্কেটগুলো কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এশিয়ার দেশটি। এ পরিকল্পনার ফলে গোল্ডম্যান স্যাকস, জেপি মরগান চেজ, ব্ল্যাকরকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাজারটিতে নিজেদের কার্যক্রম আরো বাড়ানোর সুযোগ পাবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে চীনা অর্থনীতিতে বিশ্বের আর্থিক খাতের মেগা করপোরেশনগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতার নতুন পর্বের সূচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরেই চীনে বিদেশী আর্থিক কোম্পানি বা করপোরেশনগুলোকে সীমিত আকারে বিনিয়োগ অনুমোদন করছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা। তবে এবার বৃহত্ পরিসরে আর্থিক বাজার উন্মুক্ত করার ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা করতে পারবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, গত বছর কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাজারটিতে নিজস্ব মালিকানায় বিনিয়োগের প্রথম অনুমোদন পায়।
বিদেশী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো শতভাগ নিজস্ব মালিকানায় আগামী বছরের প্রথম দিন থেকে চীনের বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। দেশটির আর্থিক খাতের জয়েন্ট ভেঞ্চারগুলোর গত বছরের মোট প্রিমিয়াম ছিল ৮ শতাংশ। তবে দেশীয় ইন্স্যুরেন্সগুলো যে গতিতে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পেরেছে, সে গতিতে জয়েন্ট ভেঞ্চারগুলো এগোতে পারেনি বলে জানিয়েছে ফিচ রেটিংস।
বিস্তৃত বণ্টন নেটওয়ার্ক ও কয়েক লাখ এজেন্ট থাকায় খাতটিতে সর্বদা স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে আধিপত্য করতে দেখা গেছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে চায়না লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পিং অ্যান ইন্স্যুরেন্সই প্রধান। নতুন ঘোষণায় বিদেশী যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থনীতিটিতে বড় পরিসরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, তাদের মধ্যে জার্মান ‘ইন্স্যুরেন্স অ্যালায়েন্স এসই’ অন্যতম। সম্পূর্ণ বিদেশী মালিকানাধীন আর্থিক কোম্পানি হিসেবে ২০১৮ সালে এটি প্রথম কমিউনিস্ট দেশটিতে বিনিয়োগের সবুজ সংকেত পায়।
এদিকে বছররের প্রথম দিন থেকেই দেশটির ব্যতিব্যস্ত শেয়ারবাজারেও নিজস্ব মালিকানায় লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। বাজারটিতে লেনদেন করে স্থানীয় প্রায় ১৫০টি কোম্পানি। গত বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিগুলোর সমন্বিত মুনাফা ছিল মাত্র ৩৪০ কোটি ইউয়ান (৪৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার)।
চীনের বর্তমান ফিউচার মার্কেটে বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ খুবই নগণ্য। বাজারটিতে জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে জেপি মরগানের শেয়ার রয়েছে ৪৯ শতাংশ। এছাড়া একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনশোরের আওতায় বাজারটিতে অল্প পরিসরে লেনদেন করে সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস গ্রুপ এজি।
তবে নতুন নীতিমালার আওতায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় হতে পারে দেশটির ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ খাত। আগামী বছরের এপ্রিল থেকে খাতটিতে সম্পূর্ণ বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো লেনদেন শুরু করতে পারবে।
আগামী কয়েক বছরে বিদেশী কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে ৭ (১ ট্রিলিয়ন ডলার) থেকে ৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুয়াং কিফান।
এতটা বিনিয়োগ নিয়ে বর্তমানে চাপে থাকা অর্থনীতিটি বড় ধরনের নিস্তার পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে। বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ও সিকিউরিটিজ সেক্টরে বিশাল এ বিনিয়োগ দেশটির বার্ষিক মুনাফা ২০৩০ সাল নাগাদ ৯০০ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
নব্বইয়ের দশকের পর সম্প্রতি সর্বোচ্চ চাপে থাকা অর্থনীতিটি এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ পাচ্ছে। প্রথমত, বিভিন্ন সুবিধার আওতায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ অনুমোদনের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক খাত ঢেলে সাজানোর সুযোগ পাচ্ছে অর্থনীতিটি। দ্বিতীয়ত, দেশটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একতরফা সুবিধা ভোগ করে বলে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের অভিযোগ খণ্ডনেরও সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বেইজিং।