যে কারণে খুলনা নৌবন্দর ত্যাগ ব্যবসায়ীদের তা হচ্ছে এখন নওয়াপাড়ায়

0

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর)॥ যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরে নোঙর করা বার্জ কার্গো থেকে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে বন্দর এলাকা। বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ নৌপুলিশ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় নিরপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন জাহাজ ও বন্দর শ্রমিকরা।

নওয়াপাড়া বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ জানান, সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ায় খুলনার নৌবন্দর ত্যাগ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা এবং যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় তাদের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বছর তিনেক ধরে সেই অবস্থা শুরু হয়েছে নওয়াপাড়া নৌবন্দরে। ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ এখন খুলনামুখী হচ্ছেন। অনেক বার্জ কার্গো এখন খুলনা এলাকায় নোঙর করছে।

নওয়াপাড়ার অন্যতম ব্যবসায়ী ও পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম মোল্লা জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে খুলনার রূপসা নৌবন্দর ত্যাগ করে যশোরের নওয়াপাড়ায় আসেন ব্যবসায়ীরা। কালক্রমে নওয়াপাড়া হয়ে ওঠে নৌপথের ব্যাণিজ্যের অন্যতম স্থান।

যশোরের ব্যবসা-বাণিজ্যের এখন গুরুত্বপূর্ণ মোকাম নওয়াপাড়া । এই মোকামে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে সার, গম, ডাল, চাল, ভুট্টাসহ নানা খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য আমদানি করে থাকেন। এসব আমদানি পণ্য বিদেশ থেকে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা হয়। খালাসের পর বার্জ-কার্গো জাহাজে করে নওয়াপাড়া নদী বন্দরে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকে ট্রাকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে নেওয়া হয়। বিশেষ করে দেশের চাহিদার ৬০ভাগ সার বেসরকারি ও সরকারিভাবে আমদানির পর এই বন্দরে আনা হয়। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী এই সার ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিএডিসির গুদামে সরবরাহ করা হয়। এ কারণে প্রতিদিন নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকায় শতাধিক বার্জ- কার্গো জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় নোঙর করে অবস্থান করে।

বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ইদানীং স্থানীয় অপরাধীরা জাহাজের শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জাহাজের কেবিন দখল করে মাদক সেবন ও অসমাজিক কাজ করছে। জাহাজ শ্রমিকরা বাধা দিলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও মারপিটের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর সাথে রয়েছে জাহাজ শ্রমিকদের মোবাইল ফোন ও টাকা- পয়সা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে নদী বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নৌপুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না।

নওয়াপাড়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ রণজিত কুমার সেন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে নৌবন্দর এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের বিষয়ে কী ভূমিকা রাখছেন প্রশ্ন করা হলে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

বুধবার নৌবন্দরের পরশ ঘাটে নোঙর করা জান্নাত ৯ নামক জাহাজে উপজেলার মশরহাটি গ্রামের বিল্লালের ছেলে মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে একদল যুবক মাদক সেবনের জন্যে কেবিন খুলে দিতে বলেন। কেবিন খুলে দিতে রাজি না হওয়ায় জাহাজের স্টাফ সৈয়দ মো. সেলিম ও লিমনকে বেদম মারপিট করা হয়। দেওয়া হয় জীবননাশের হুমকি ।

ঘাটের শ্রমিক সরদার মনিরুজ্জামান মানিক জানান, বিষয়টি নৌপুলিশকে জানালে নৌপুলিশ তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। নিরুপায় হয়ে তিনি অভয়নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।