দখল-অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে মণিহার-মুড়লি চার লেন মহাসড়ক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক মণিহার-মুড়লি চার লেন মহাসড়কটি বর্তমানে দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে কার্যকারিতা হারাতে বসেছে। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পুনঃনির্মাণের পর শহরের যানজট নিরসন ও জনদুর্ভোগ কমানোর আশা করা হলেও বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

মহাসড়কের দুই পাশে দুই শতাধিক পরিবহণ সরঞ্জাম বিক্রেতা ও মেরামতের দোকানিরা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন সড়কের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি যান চলাচলেও মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

২০১৯ সালের ১ অক্টোবর এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে মণিহার থেকে মুড়লি পর্যন্ত রাস্তা চার লেনে উন্নীত করা হয়, যাতে বর্ষায় কাদা-পানি এবং শুষ্ক মৌসুমে ধুলার যন্ত্রণা থেকে জনগণ কিছুটা মুক্তি পায়। উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর কিছুদিন জনসাধারণ স্বস্তি পেলেও, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি আবারও নাজুক হয়ে পড়ে। মূলত, মোটর পার্টস ব্যবসায়ী, গাড়ির বডি মেরামতের কারিগর, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা এবং বিভিন্ন রুটের বাসচালকরা রাস্তার ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্ধারিত অংশটুকু দখল করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করেন।

রাস্তার পাশে নির্ধারিত লেনে ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান এবং মোটরসাইকেলের মতো হালকা যানবাহন চলাচলের কথা থাকলেও, দেখা যায় সেই লেনজুড়ে সারি সারি ট্রাক, মিনি ট্রাক ও বাস দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকে রীতিমতো রাস্তার ওপরেই গাড়ির বডি কাটাছেঁড়া, মেরামত এবং খোলা জায়গায় ইঞ্জিন, তেল, গ্রিজের মতো রাস্তার জন্য ক্ষতিকর বস্তু রাখছেন। ফলে রাস্তার গঠনগত স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ বলেন, ‘রাস্তার সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে পানি, তেল, গ্রিজ, পেট্রোল ও ডিজেল। কিন্তু এখানকার দোকানিরা সেইসব ক্ষতিকর বস্তু নিয়মিতভাবে রাস্তার ওপরেই ব্যবহার করছেন।’ তিনি আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় ভবিষ্যতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মেরামত করবে, তবে এই ধরনের মনুষ্যসৃষ্ট ক্ষতি তাদের দায় নয়।

এ বিষয়ে সরাসরি অভিযুক্তদের জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ দায় স্বীকার করে ভবিষ্যতে ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দেন, আবার কেউ তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের অজুহাত দেন। যেমন, শরিফুল ইসলাম নামের একজন গাড়ি মিস্ত্রি রাস্তার ওপর ট্রাক কাটছিলেন। জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তার দোকান ভিতরে হলেও তাৎক্ষণিক কাজের জন্য রাস্তায় এসেছেন। একইভাবে পারভেজ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও অনেক পুরোনো ইঞ্জিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। দোকানি জানান, তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলো সরিয়ে ফেলবেন।

ইজিবাইকচালক আব্দুর রহিম বলেন, হালকা যানবাহনের জন্য যে আলাদা লেন তৈরি হয়েছে, তা প্রায় সময়ই দখল হয়ে যায়। ফলে তারা নির্ধারিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই কথা বলেন ট্রাকচালক শামীম আকতার।

তিনি বলেন, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাস্তা চওড়া করা হলেও নড়াইল রুটের বাসগুলো রাস্তার মাঝখানে পার্কিং করে রাখায় নতুন করে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা করেছে এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতন করতে চেষ্টাও করেছে, কিন্তু তাতে কোনো কার্যকর ফল আসেনি।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সড়কের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যবর্ধন টিকিয়ে রাখতে দ্রুত এসব স্থানের পরিবহনসহ সব ধরনের অবকাঠামো সরিয়ে নিতে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে।’