মনিরামপুরে মেসকাত হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত শাহীন গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাইস মিলের শ্রমিক মেসকাত হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত শাহীন হোসেনকে (৪৪) গ্রেফতার করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। গত রোববার বিকেলে যশোর শহরের শংকরপুরে কেন্দ্রীয় বাসটার্নিমাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া শাহীন হোসেনের স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত ১টি চাকু ও ১টি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার।
শাহীন হোসেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে। বর্তমানে তিনি যশোর শহরের শংকরপুর জমাদ্দার পাড়ার জনৈক বাবুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, ইতোপূর্বে মেসকাত হত্যাকা-ে জড়িত রিক্তা পারভীন নামে এক নারীকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। রিক্তা পারভীন রাইস মিল শ্রমিক মেসকাত হত্যাকান্ডে প্রধান অভিযুক্ত শাহীন হোসেনের ফুফাতো বোন। আদালতে দেওয়া তার (রিক্তা) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশ পায়, দুই লাখ টাকা চুক্তিতে মেসকাতকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন তার মামাতো ভাই শাহীন হোসেন।
এরপর ডিবি পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত শাহীন হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য তৎপর হয়। গত রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শংকরপুরে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকা থেকে তারা প্রধান অভিযুক্ত শাহীন হোসেনকে গ্রেফতার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাড়া বাড়ির কাছের একটি ড্রেনের ভেতর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ১টি চাকু এবং শংকরপুর থেকে শাহীন হোসেনের প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হলে শাহীন হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বর্ণালী রানী তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জবানবন্দিতে শাহীন হোসেন বলেছেন, রিক্তা পারভীন সম্পর্কে তার ফুফাতো বোন। ছোট বেলায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। এরপর দুই জনের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। তার ফুফাতো বোন রিক্তা পারভীনের সাবেক জা সৌদি প্রবাসী নাজমা। এক সময় নাজমা ও মেসকাত সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার একটি বস্তার কারখানায় কাজ করার সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। পরে নাজমা সৌদি আরবে চলে যান। মেসকাত তার বর্তমান স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা বলে নাজমার কাছ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এরপর মেসকাত ও নাজমার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। গত রোজার ঈদের দ্বিতীয় দিনে শাহীন হোসেন ঝাউডাঙ্গায় ফুফুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ফের রিক্তা পারভীনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এ সময় রিক্তা পারভীন তাদের মধ্যকার কিছু কথা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। এরই মধ্যে রিক্তা পারভীন তাকে একদিন জানান, নাজমা ও মেসকাতের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নাজমার নাথে প্রতারণা করেছেন মেসকাত। তাই মেসকাতকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছেন নাজমা। তখন মেসকাতকে মার্ডার করার অফার শাহীন হোসেনকে দেন রিক্তা পারভীন। মেসকাতকে মার্ডার করার জন্য রিক্তা পারভীনের সাথে নাজমার ২ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিলো। এ সব কথা শুনে মেসকাতকে মার্ডার করার কাজটি করতে অস্বীকার করেন শাহীন হোসেন এবং তিনি বাসায় চলে আসেন। দুই দিন পর শাহীন হোসেনকে মোবাইল ফোন করেন রিক্তা পারভীন এবং তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা কথোপকথন তাকে শোনায়। তাকে ভয় দেখিয়ে রিক্তা পারভীন বলেন, মার্ডার করার কাজটি না করলে ওই রেকর্ডিং তার স্ত্রীকে শোনাবেন। ফলে ভয় পেয়ে যান শাহীন হোসেন এবং মেসকাতকে মার্ডার করতে রাজি হন। মার্ডার করার আগের দিন মেসকাতকে মোবাইল ফোন করেন নাজমা এবং তাকে সাতক্ষীরার সঞ্জয়ের দোকানে বন্ধক রাখা কিছু সোনার অলঙ্কার ছাড়িয়ে তার (নাজমার) পিতার বাড়িতে রেখে আসতে বলেন। নাজমা তাকে একথা বলেন যে, ঝিকরগাছা বাজারে তার জন্য একটি প্রাইভেটকার থাকবে। ওই প্রাইভেটকারে করে মেসকাত যেন সাতক্ষীরায় গিয়ে বন্ধক রাখা সোনার অলঙ্কার ছাড়িয়ে তার পিতার বাড়িতে রেখে আসেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গত ১ মে সন্ধ্যায় ঝিকরগাছা বাজার থেকে মেসকাতকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে সাতক্ষীরার সঞ্জয়ের দোকানের সামনে যান শাহীন হোসেন। দোকান থেকে অলঙ্কার ছাড়িয়ে শাহীন হোসেনের প্রাইভেটকারে করেই নাজমার পিতার বাড়িতে পৌঁছে দেন মেসকাত। পরে ফেরার পথে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি মেসকাতকে পান করতে দেন শাহীন হোসেন। ওই পানি পান করার পর মেসকাত অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে মনিরামপুরে চলে আসেন শাহীন হোসেন। পরে গাড়ি থেকে মেসকাতকে বের করে একটি মাঠের মধ্যে নিয়ে চাকু দিয়ে তার বুকে কয়েকটি আঘাত করেন শাহীন হোসেন। এছাড়া তার কাছে থাকা ২টি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে পরদিন রিক্তা পারভীনের বাড়িতে যান শাহীন হোসেন। তার কাছে মেসকাতের ২টি মোবাইল ফোন সেট হস্তান্তর করেন তিনি। তখন রিক্তা পারভীনের মোবাইল ফোন সেট থেকে কথোপকথনের রেকর্ডিং ডিলিট করে দেওয়া হয়। মার্ডার করার কাজের জন্য রিক্তা পারভীন ইতঃপূর্বে শাহীন হোসেনকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। মার্ডার করার পর বিকাশে আরও ৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।