রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্ধশতাধিক ডাকাতের হামলা, ১ জন গুলিবিদ্ধ ৫ নিরাপত্তা কর্মী আহত

0

বাগেরহাট ও রামপাল সংবাদদাতা॥ রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অভ্যন্তরে সংঘবদ্ধ একদল ডাকাত দলের হামলায় ৫ নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ডাকাত দলের ২ জন সদস্যও আহত হন। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, গুরুতর ২ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডাকাত দলের সদস্য গুলিবিদ্ধ আসাবুলকে চালনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রাসেলুর রহমান। তবে আটক ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানা বিস্তারিত জানাননি পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে, বুধবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক ভবনের গেটে ডাকাতির চেষ্টায় দুর্বৃত্তরা হামলায় চালায়। এতে আহত পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক ভবনের গেট দিয়ে ডাকাতির উদ্দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। বাঁধা দিলে অস্ত্রধারীরা গেটে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা করে। নিরাপত্তাকর্মীদের ডাক চিৎকারে আনসার সদস্যরা ছুটে গেলে তাদের ওপর ও হামলা করে ডাকাত দল। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়লে তারা পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের হামলায় দুই আনসার সদস্যসহ পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মঙ্গলা হারিন্দ্রান সাংবাদিকদের জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পশুর নদী দিয়ে একটি নৌকায় ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি ডাকাত দল সীমানার তারকাঁটার বেড়া কেটে ভেতরে ঢুকে মালামাল লুটের চেষ্টা করে। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনরার সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের বাধা দিলে তারা তাদের ওপর চড়াও হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপতাড়িভাবে হামলা করে। এতে আনসার সদস্য আকরাম হোসেন (৫২), হাবিলদার কামাল পাশা (৫৪), নিরাপত্তা কর্মী ব্রজেন মন্ডল (৪৫), শহিদুল শেখ (৩৬) ও মিন্টু বৈরাগী (৪৫) গুরুতর জখম হন। অপরদিকে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে আসাবুল গাজী (২৫) আহত হন।
ওই রাতে তাদেরকে উদ্ধার করে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে মিন্টু বৈরাগী ও কামাল পাশাকে বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে ডাকাত দলের সদস্য আসাবুল (৪০) নামের এক ব্যক্তি আহত হন। তার বাড়ি রামপাল উপজেলা কৈগর্দাসকাঠি এলাকায়।
আনসার সদস্যদের দাবি, নিরাপত্তাকর্মীদের হামলা করলে আসার হাবিলদার মোঃ কামাল পাশা ও সিপাহি মোঃ জাহিদুল ইসলাম অস্ত্রধারীদের দাওয়া করে। অস্ত্রধারীরাও উল্টো আনসার সদস্যদের উপর হামলা করে। এক পর্যায়ে কামাল পাশার মাথায় আঘাত করে। তখন আত্ম রক্ষাতে কামাল পাশা অস্ত্রধারীদের উপর গুলি ছোড়ে। ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ার পরে অস্ত্র ধারীরা পালিয়ে যায়। কামাল পাশার গুলিতে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য আশাবুল গাজী (২০) গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার ৩ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক মোল্যা আবু সাইদ।
তিনি বলেন, আহত আনসার সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালিয়ে এসএমজি পিস্তলের ২৬ টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মো. তরিকুল ইসলাম জানান বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ৫ নং গেটের সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে ডাকাত দল ভেতরে ঢুকে মালামাল লুটের চেষ্টা করছিল।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি কোন ডাকাতির ঘটনা নয়। চক্রের সদস্যরা মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল চুরি করতে এসেছিল। ঘটনার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ মামলা দিলে মামলা দায়ের করা হবে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিরাপত্তা ও প্রশাসন মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাঝে মাঝে চুরি হয়। কিন্তু কখনও এক সাথে এত বেশি দুস্কৃতিকারী আসেনি। এখানে শুধু মালামাল চুরি বা লুট নয়, অন্য কোন বিষয় আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডটি মূলত মূল কেন্দ্রের বাইরে। কাটাতার দিয়ে ঘেরা এই ইয়ার্ডে লোহার রড, তামার তার, তামার তারের বাক্স, লোহার এ্যাঙ্গেল, স্টিলের পাত, লোহার পাতসহ ব্যবহার যোগ্য ও ব্যবহার অযোগ্য বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু রাখা হয়। মূলত এসব ধাতু লুট করতেই সংঘবদ্ধ চক্রটি ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এই কেন্দ্রে ছোট ছোট চুরির ঘটনা ঘটে আসছে।
এ বিষয়ে রামপাল থানার অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ জানান, ওই ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।