ডিম ছাড়তে প্রস্তত নয় ইলিশ, ১২ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে (১২ অক্টোবর) ডিম ছাড়ার জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় পড়ছে ইলিশ। অথচ উপকূলীয় এলাকার দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভান্ডারখ্যাত জেলে ও মৎসজীবীদের দাবি, এই সময়ে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মোটেও প্রস্তত না। তারা বলছেন, সুফল পেতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা এক মাস পিছিয়ে দিতে হবে। ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার গবেষণালব্ধের ফল, এটাই নাকি সঠিক সময় বলে তা মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এখনও ইলিশের পেটে পরিপূর্ণভাবে ডিম আসেনি, এ কারণে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জেলে ও মৎস্যজীবীরা।
সরকারের ঘোষণার পরই ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মহিপুরের জেলে ও ব্যবসায়ীরা। একইভাবে নিষেধাজ্ঞা পেছানোর দাবি জানিয়েছে উপকূলীয় জেলা বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশন। মৎস্যজীবীদের দাবি, আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ২২ দিন মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে। গত বছরও নিষিদ্ধ সময়ের পরেও যশোরের বাজারে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে করে সরকারের মৎস্যসম্পদ রক্ষার পরিকল্পনায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর থানা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের সাথে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন,‘আমরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা এক মাস পিছিয়ে দিতে। এ বিষয়ে এখনও আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে এখনও আমাদের দাবি বহাল আছে। এক্ষেত্রে সরকার যদি পূর্ব সিদ্ধান্ত বহাল রাখে, সেক্ষেত্রে আমরা তার বিরোধিতা করবো না।’
কথা হয় বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের সাথে। তিনি মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণের বিষয়ে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) লোকসমাজকে বলেন, ‘এই নির্ধারণের সময়টা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করে নেওয়া হয়। মূলত মৎস্য আইনের বিধানের ওপর ভিত্তি করেই ্এটা করা হয়েছে। আসলে আমরা যাচাই করে দেখেছি এটা সঠিক সময়।’ তিনি আরও বলেন, ইলিশ সাধারণত সারা বছরই ডিম দেয়। আমরা যখন নিষেধাজ্ঞা দিই তখন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার বাইরে ৫০ শতাংশ পরে ধরা পড়ে। আমাদের ৫০ শতাংশ ডিম ছাড়লেই যথেষ্ঠ।
এদিকে ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশের দাম মোটেও কমেনি। ভালো মানের নদীর মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশ কিনতে মোটা অঙ্কের টাকা গুণতে হচ্ছে। শুক্রবার যশোর বড়বাজার মাছবাজারে খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলীকে ১ কেজি ৯৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ২৭২৫ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ২২০০ টাকা, ১ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৮০০ টাকা, ১ কেজি ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ৬০০/৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১২০০ টাকা ও ৩টায় কেজি ইলিশ ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। তাছাড়া শুক্রবার সাগরের নোনা পানির ইলিশ ৫/৬ টায় কেজি ৪০০ টাকা ও ৪টায় কেজি ৫০০/৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।