যশোর বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া মানছে না সরকারের নির্ধারিত দাম

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।।  সরকারের নির্ধারিত দামে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ পার হলেও বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমেনি। চার মাস আগে বেঁধে দেওয়া চিনির দামও পর্যন্ত কার্যকর করতে পারেনি সরকার। ফলে ভোক্তারা শেষ ভরসা ও আশ্রয়স্থল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ভোক্তাদের আক্ষেপ, সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে এখন দুটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে।
এক উচ্চবিত্ত আর দ্বিতীয়টি নিম্নবিত্ত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি হারিয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার যশোরের বড়বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের হালচাল ও ভোক্তাদের এমন অভিমত পাওয়া যায়।
মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনটি কৃণিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। আলু, পিঁয়াজ ও ডিমের দাম। ফার্মের মুরগির ডিম খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা, আলু খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা ও দেশি পিঁয়াজ খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতিকেজি ৬৪-৬৫ টাকা।
একমাত্র ডিমের দাম ১২টাকায় নেমে আসার কারণ হিসেবে সরকার বিদেশ থেকে ৪ কোটি পিস মুরগির ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে দাম কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আলু ও দেশি পিঁয়াজের দাম কমেনি। বাজারে বহাল তবিয়তে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিয়ে চলেছেন।
গতকাল শুক্রবার যশোরের বড়বাজারে দেশি পিঁয়াজ প্রতিকেজি ৭৫ টাকা, ভারতীয় আমদানি করা পিঁয়াজ ৬০ টাকা ও আলু প্রতিকেজি ৪৫ টাকা দরে প্রকাশ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা অবলীলায় সরকারের নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে বুক ফুলিয়ে উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি করে চলেছেন। মাঝে-মধ্যে ভোক্তা অধিকারের দুয়েকটা তদারকি অভিযানে জরিমানা করা হলেও বাজার কোনরকম নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ভোক্তারা বলছেন অসাধু ব্যবসায়ীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমনটি ঘটছে। অথচ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রয় হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করবেন। আইন অনুযায়ী দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
গতকাল বড়বাজারের আড়তদাররা অভিযোগ করেন, রাজারহাট ও নাভারণে কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসায়ীরা পাইকারি ৩৭-৩৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন, তারা কোনো বিক্রয় রশিদ দিচ্ছেন না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যবসায়ীদের প্রতিকেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে কয়েক দফা চিনির দাম নির্ধারণ করার পর আবারও চার মাস আগে গত ১০ মে সরকার ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে পরিশোধিত খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। অথচ আজ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা সে দাম মানেনি। গতকাল শুক্রবার বড়বাজারে প্রকাশ্যে খোলা চিনি ১৩০-১৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার বড়বাজারে আব্দুল হালিম নামে এক ক্রেতা বলেন,‘আমাদের শেষ ভরসাস্থল হলো সরকার, অথচ সরকারের নির্ধারণ করা দাম মোটেও তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে কি সরকার এসব ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি ? কেন কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ? তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, ভাই আমরা আগে ছিলাম মধ্যবিত্ত শ্রেণির, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পড়ে এখন নিম্নবিত্তের কাতারে চলে এসেছি।’
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক তামান্না তাসনীম দৈনিক লোকসমাজকে জানান, ‘আমরা যশোরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অনিয়মকারীদের জরিমানা করা হয়েছে। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ এসেছে। বাকি, আলু-পিঁয়াজের বাজার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো। আমরা বাজার নজরদারি আরও জোরদার করেছি।’