চুয়াডাঙ্গায় ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ভাল ফলন পাচ্ছেন কৃষক

0

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা॥ চুয়াডাঙ্গায় আউশ মৌসুমে নতুন জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে প্রথমবারেই ভাল ফলন ও দাম পাচ্ছেন কৃষক। কম সময়ে অধিক ফলন, চাষে খরচ কম হওয়ায় চাষিদের এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
সাধারণত আউশ মৌসুমের অন্যান্য জাতের ধানে ১৬ থেকে ১৭ মণ ফলন হলেও নতুন এই ধানে বিঘা প্রতি গড়ে ২২ মণ ফলন পাওয়ায় চাষিদের মুখে ফুটেছে তৃৃপ্তির হাসি। শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাঁচি দিয়ে ধান কাটছেন। আবার কোথাও কোথাও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারে চলছে ধান কাটার উৎসব।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত আউশ মৌসুমে জেলার সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। ভাল ফলন পেয়ে ওই বীজ থেকে চারা তৈরি করে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে এ ধান চাষ করেন চাষিরা। তাতে ৭ হাজার ১৪৩ মেট্রিক টন ধান ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে জেলায় আউশ ধান চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৭ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর। গত ৮ বছরের ব্যবধানে আউশ ধান চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে নতুন জাতের ব্রি-৯৮ ধানের চাল লম্বা, চিকন, সাদা ও দামও বেশি হওয়ায় চাষিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গত বছরই প্রথম ১০ হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জগবন্ধু বোস জানান, মোক্তারপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর আউশ মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। গত বছর পুরো জমিতে ব্রি-৪৮ চাষ করেছিলেন। এ বছর ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৮ এবং ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৯৮ ধান চাষ করেছেন।
সদর উপজেলার খেঁজুরতলা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এতদিন তিনি খাটোবাবু ধান চাষ করে আসছিলেন। অনেকের কাছে শুনে ব্রি-৯৮ ধান চাষের জমি দেখতে এসেছি। ধানটা খুবই চিকন আর লম্বা, চিটে নেই। আগামীতে তিনি ৫ বিঘা জমিতে এই ধান চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
কার্পাসডাঙ্গার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, উন্নত জাতের ধানে তুলনামূলক ফলন কম হওয়ায় আউশ ধান চাষ দিন দিন কমছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় আউশ মৌসুমের জন্যে উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯৮ খুবই সম্ভাবনাময়। সাধারণত অন্যান্য জাতের ধান বীজতলা থেকে চারা তুলে লাগানোর পর ১০৫ থেকে ১২০ সময় লাগে। সেখানে ব্রি-৯৮ ধান ৯০ থেকে ১০০ দিনে কৃষক ঘরে তুলতে পারছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এর আগে এ জেলায় ব্রি ধান-৯৮ চাষ হয়নি। গত মৌসুমের শুরুতে আউশ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্রিধান- ৯৮ নিয়ে কাজ শুরু করি। ১০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৯৮ জাতের ধান চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। এমন ফলন দেখে কৃৃষকরা বেশ খুশি হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ব্রি ধান-৯৮ মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় করতে পারলে দেশে উচ্চ ফলনশীল ধান আবার বড় ফসলে পরিণত হবে।