চৌগাছায় বিদ্যালয়ের জমি দখল করে আ.লীগের অফিস!

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ খাল বিল, নদ নদী, পুকুর ডোবা এমনকি ফসলি জমি দখলের পর এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলে নিয়ে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে চৌগাছার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। চৌগাছায় পাতিবিলা হাজী শাহজাহান আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণের জন্যে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানতে চাইলে ওই নেতারা সন্ত্রাসীদের মতই প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা বরাবর মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক। এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পাতিবিলা হাজী শাহজাহান আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে বিদ্যালয়ের জমি দখলের পর মাটি ভরাট করেন পাতিবিলা গ্রামের টিটো ও ফারুক হোসেন নামের চিহ্নিত দুই ব্যক্তি। মাটি ভরাটের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ওয়ালিউর রহমান তাদের কাছে জানতে চান বিদ্যালয়ের জমি দখলের অনুমতি তারা কোথা থেকে পেয়েছেন।
তখন টিটো প্রধান শিক্ষককে বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস হবে। তাই কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়িত্ব আমার। কেননা আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আপনারা প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করবেন আর প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি জানতে পারবনা সেটা হতে পারে না।
এ সময় টিটো প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করেন ও বেশি বাড়াবাড়ি করলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এরপর দখলকৃত স্থানে রাতারাতি একটি সাইনবোর্ড উত্তোলন করা হয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, দলীয় কার্যালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ৭ নং পাতিবিলা ইউনিয়ন শাখা, চৌগাছা, যশোর। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, টিটো এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইউপি সদস্য ঠান্ডু একটি হত্যা মামলার আসামি। তারা আরো বলেন, ঠান্ডু জেলহাজতে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজের ইচ্ছমত এই কাজ করেছেন। তবে ঠান্ডুর এই কাজে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক পর্দার আড়াল থেকে কাজ করছেন। তিনি নিজেকে আ.লীগের বড় নেতা পরিচয় দেন।
প্রধান শিক্ষক শেখ ওয়ালিউর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে দখলদাররা আমাকে অপমান করে ও হুমকি দেয়। এ বিষয়টি ইউএনও স্যার ও ওসি বরাবর মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এবং পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম মিয়া জানান, দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি দলের নেতাদের সাথে কোনো যোগাযোগ না করে এটি করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি বলেন, সরকার ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের কারো এখতিয়ার নেই। যারা গর্হিত কাজটি করেছে তাদের বিষয়টি নিশ্চয় দেখা হবে। তিনি বলেন, যারা এই কাজটি করেছে তারা দলের কোনো পদে নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে ওসিকে বলেছি। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের সুযোগ নেই।
থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর মুঠোফোনে বারংবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।