বাগেরহাটে সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬৮টি পদের ৪৫টিই শূন্য, পাঠদান ব্যাহত

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও ল্যাব সংকটসহ নানা সংকটের মধ্যে চলছে বাগেরহাটের একমাত্র সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষক সংকটে দুই শিফট বন্ধ করে একটি শিফটে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে পাঠদানে ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নেই ক্যান্টিন ও উপযোগী খেলার মাঠ।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যাপীঠে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য কোনো ক্যান্টিন নেই। একটি খেলার মাঠ থাকলেও, বছরের চারমাস জলাবদ্ধ থাকে মাঠটি। এক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল থাকলেও, বর্তমানে কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তির শিকার হয় দূর থেকে আসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
জেলার ফকিরহাট উপজেলা থেকে আসা মো. হুসাইন নামে এক শিক্ষার্থী বলে, নিয়মিত দূর থেকে অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করি। থাকার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা থাকলে কষ্ট লাঘব হতো।
ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেডের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলামিন বলে, সামান্য বৃষ্টিতে মাঠ জলাবদ্ধ হয়ে যায়। মাঠে খেলাধুলা করতে পারি না। শ্রেণিকক্ষে পানির মেশিন থাকলেও, নিয়মিত খাবার পানি পাওয়া যায় না। কলেজের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনও নেই।
ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক অমিয় কুমার পাল জানান, নতুন করে তিনটি শ্রেণি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কোনো শিক্ষক কর্মচারীর নিয়োগ করা হয়নি। নানা সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান সঠিকভাবে করানোর চেষ্টা রয়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদশা মিয়া জানান, ৫তলা বিশিষ্ট একটি অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে, সম্পন্ন হলে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকটের সমাধান হবে। শিক্ষক সংকট ও মাঠের সমস্যা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৩ দশমিক ৯০ একর জমির উপর ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই)’ নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৩ সালে ‘বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ’ নামে রুপান্তরিত হয়। তারপর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি,জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং,ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন এই চারটি ট্রেডে এসএসসি ও এইচএসসি( ভোকেশনাল)বিষয়ে পড়ানো হত। সরকারি নির্দেশে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চালু ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল কোর্স চালু করে, ২০১৯ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কলেজটিতে একজন অধ্যক্ষ, ট্রেড কোর্সগুলোর জন্য ৮জন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ৭জন ইনস্ট্রাক্টর, ১৪ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৮ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৪ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাধারণ বিষয়ের জন্য ১৬ জন শিক্ষকসহ ৬৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি পদই শূন্য। শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ, ৬ জন ইনস্ট্রাক্টর, ৫ জন ইনস্ট্রাক্টর, ১১জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৬ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৩ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ৯জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী স্টোর কিপার ও ২ জন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। এতসব শূন্যতার মধ্যে চলতি বছর থেকে নতুন করে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন চালু করা তিনটি শ্রেণির জন্য কোনো শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি সরকার। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম চলছে এক শিফটে।