অর্থ অপচয়ের দায়ে বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালে মাশরুম চাষ প্রকল্প চালু হল ফের

0

আকরামুজ্জামান ॥ মাশরুম চাষের ফের সুদিন ফিরছে যশোরে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ মাশরুম চাষে এক সময়ে এ অঞ্চলের শ’ শ’ বেকার নারী-পুরুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাসাবাড়ি ও অল্প জায়গার মধ্যে চাষ করে সচ্ছলভাবেই জীবনযাপন করতেন তারা। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই সরকার গৃহিত মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ায় ঝরে যায় এসব উদ্যোক্তরা। অবশেষে প্রায় ৯ বছর পর আবার সরকারিভাবে মাশরুম চাষের প্রকল্প গ্রহণ করায় ফের আশার আলো দেখছেন ঝরে পড়া উদ্যোক্তারা।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০১ সাল থেকে যশোরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী-পুরুষ মাশরুম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এরপর সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মাশরুম উন্নয়ন ও জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহায়তা করা হয় সে সময়ে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরের দ্রুত বিকশিত হয় মাশরুম চাষ। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় শিক্ষিত নারী-পুরুষেরা মাশরুম চাষের সাথে জড়িয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করতে থাকেন। কিন্তু এরই মাঝে ২০১৪ সালে প্রকল্পের টাকা অপচয়ের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সরকার গৃহিত মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্প। এতে বেকার হয়ে পড়েন জেলার প্রায় তিন হাজার উদ্যোক্তা।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর যশোরে ফের সরকারি উদ্যোগে মাশরুম চাষ শুরু হয়েছে। ‘মাশরুম চাষের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ নামক প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের ফের সংগঠিত করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দিপঙ্কর দাস বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মাশরুম চাষের জন্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, যশোরে দুটি ব্যাচে মোট ৬০ জন নারী-পুরুষকে মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রথম ব্যাচে ৩০ জন নারী-পুরুষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহায়তা দেয়া হবে। ফলে এর মাধ্যমে আমরা মনে করছি যশোরাঞ্চলে মাশরুম চাষের পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
এদিকে বিলুপ্ত প্রায় মাশরুম আবার শুরু হওয়ায় উদ্যোক্তারা বেশ আশা দেখছেন। যশোরের ঝিকরগাছার কুলবাড়িয়া গ্রামের ইমাদুল হক বলেন, মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। এক সময়ে যশোরে মাশরুম চাষে বিপ্লব সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা পথে বসে যান। তিনি বলেন, আমরা খুশি সরকার দেরিতে হলেও মাশরুম চাষে উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে আবারো মাশরুম চাষে এ এলাকার শত শত বেকার মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেন।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, মাশরুম চাষের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে উদ্যোক্তাদের সবসময়ই দাবি ছিলো এটি ফের চালু করা হোক। এসব দিক বিবেচনায় সরকার আবার মাশরুম চাষের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, অন্যসব চাষের অপেক্ষা এ জাতীয় ফসল চাষ একেবারেই সহজ। এরজন্যে বাসাবাড়ির আঙ্গিনা ও ছাদ ব্যবহার করে লাভবান হওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে আবার মাশরুম চাষের অতীত ঐতিহ্যে ফিরে পাবে বলে তিনি আশা করেন।