ড. ইউনূসের আত্মসম্মান নেই বলে বিবৃতি ভিক্ষা করছেন : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আত্মবিশ্বাস থাকলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করতেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকতো আমি কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এছাড়া আমাদের সব কিছু আইন অনুযায়ী চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয়। আর যদি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। আর লেবার কোর্টে মামলা হয়, আমাদের কী সেই হাত আছে মামলা বন্ধ করে দেব?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মামলাটি চলমান (সাব জুডিস)। আমাদের দেশে আমরা চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাও করি না। কারণ এটা সাব জুডিস। যেখানে যেটি নিজের দেশে সাব জুডিস হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে বাইরের থেকে বিবৃতে এনে মামলা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার? আমার কী অধিকার আছে? আমার সেই ক্ষমতা আছে? জুডিশিয়াল তো স্বাধীন। আমরা তো হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠাক, এক্সপার্টরা দেখুক অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সব কিছুই আইন মতো চলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে। কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
তিনি বলেন, বিবৃতি না দিয়ে তাদের ক্লায়েন্টের জন্য অভিজ্ঞ লোক পাঠাক। তারা কাগপত্র ঘেঁটে দেখুক, এটা আসলে কী? মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।
নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন (যেতে হয়েছে)।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কিনা, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কিনা?, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলেব। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি (নিয়মে চলে)। তাহলে সরকারি বেতনভুক্ত একজন কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্রিকসের সদস্য পদ পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের কোনো চিন্তা ছিল না। এ কারণে সদস্য হওয়ার চেষ্টাও করিনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চাইলে (ব্রিকসের সদস্য পদ) পাবো না, বিষয়টি তেমন নয়। আমরা কাউকে বলিনি, আমাদের সদস্য করো। সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা ঠিক নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। এবার তারা কিছু সদস্য নেবে সেটাও আমরা জানতাম। এ বিষয়ে আমাদের মতামত চাইলো। আমরা মতামত দিয়েছে। কিন্তু সদস্য হওয়ার চেষ্টা করিনি।
বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি এ আহ্বান রাখেন বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন চীন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
মানুষের ভোটের অধিকার একমাত্র আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন সামরিক একনায়করা নির্বাচন করত, খালেদা জিয়া যখন ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করল তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুষ্ঠু ভোটের সুর কোথায় ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ যখন ভোট চুরি করল, করল এবং ১৫’ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করল তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিকথা কোথায় ছিল। ২০০১’ এর নির্বাচনে অত্যাচার-নির্যাতন করে জোর করে আমাদের হারানো হল।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে। এদেশে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেওয়া ও আলাদা বাজেট দেওয়া হয়েছে।