চৌগাছায় ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই, আমন চাষে সেচই ভরসা

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। খরায় আমনের ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। আমন চাষ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন উপজেলার চাষিরা। সেচের পানিই একমাত্র ভরসা তাদের। সেচ,সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ার কারণে এ বছর আমন চাষে বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। ফলে চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ। অনেকে ধান চাষ বাদ দিয়ে অন্য আবাদে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮,৩৩৬ হেক্টর। ২০ জুলাই পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৯০৫০ হেক্টরে। আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৫ শ্রাবণ পর্যন্ত। বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
উপজেলার বড়গোবিন্দপুর গ্রামের আমন চাষি সেলিম হোসেন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমনের ক্ষেত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে কৃষকের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। সেচ ছাড়া আমনের জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না চাষিরা। গত বছরে আষাঢ়ের ১৫ তারিখের পর থেকে জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণ শুরু করতেন এ এলাকার কৃষকরা। এ বছর খরার কারণে চলতি সৌসুমে তা দেরি হচ্ছে।
উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের আমন চাষি আবু তৈয়ব বলেন, বাংলা দিনপঞ্জির হিসেবে আজ (শুক্রবার) ৬ শ্রাবণ। কিন্তু এই ভরা বর্ষার মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। কখনো কখনো দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে উপজেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টর আমন চাষি বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের আমন চাষি কবির হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচ- তাপদাহে তার আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক লাভলুর রহমান, আবু সিদ্দিক, ছোট খোকনসহ অনেকে বলেন, খরায় মাঠে ধান-পাট ও সবজির গাছ পুড়ে বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। আমনক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। আমনের জমি তৈরি করতে জমিতে হাল দেয়া যায়নি। বৃষ্টি না হওয়াতে সময় মতো চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে সেচ দিয়ে আমন রোপণ করছেন। এতে বিঘা প্রতি খরচ বাড়বে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তারা জানান সেচ, সার, তেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ার কারণে ধান উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। তাই অনেক কৃষক ধানের আবাদ বাদ দিয়ে ড্রাগন, পেয়ারা, পটল, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, সুখপুকুরিয়া, নারায়নপুর, হাকিমপুর, জগদিশপুর, পাতিবিলা, স্বরুপদাহ, ধুলিয়ানী ও পাশাপোল এলাকার মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাঁ খাঁ করছে মাঠের পর মাঠ। অনেকে সেচের পানি নিয়ে আমনের ক্ষেত তৈরি করছেন। অনেক পাট চাষির পাট কাটা জরুরি হলেও পানির অভাবে কাটতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মুসাব্বির হুসাইন বলেন, খরার কারণে কৃষকেদের মাঠে হাল চাষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এ কারণে ফলনে উপজেলায় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। বৃষ্টি হতে দেরি হলে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে রোপা আমন রোপণ করা যেতে পারে।