যশোরে তদারকির গাফিলতি পণ্য বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ ঈদের পরে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পরিবর্তে আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মুরগির দাম। গরুর মাংসও বিক্রি হচ্ছে বিক্রেতাদের ইচ্ছেমত দামে। তাছাড়া ভরা মৌসুমেও ৫০/৬০ টাকার নিচে কোনও সবজি মিলছে না বাজারে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা আড়ত থেকে অর্ধেক দামে কিনে দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভোক্তাদের অভিযোগ, সঠিক তদারকির অভাবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিক্রেতাদের হাতে। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) যশোরের বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
রোজার আগে প্রতি কেজি পিঁয়াজ খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছিল ৩০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। রোজার আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ২৫ টাকা। কেজিতে ৫টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। ১৪০ টাকার রসুনেও ৪০ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। বড়বাজার এইচ এম এম রোডের কালীবাড়ী মার্কেটের আড়ত মদিনা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শেখ জিয়া আলম শুক্রবার জানান, চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ-রসুনের আমদানি বাজারে কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তিনি আরও জানান, মাসখানেকেরও কম সময় হচ্ছে ভাতি পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে, আগামী দু এক সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহ বেড়ে দাম কমে আসবে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, অথচ পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতির অভিযোগ তুলে বাজারে কৃত্রিম সংকটের ধোঁয়া তোলা হচ্ছে।
এদিকে, রোজার মধ্যে খামারের ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। সেই সাথে সোনালী মুরগির দাম বেড়ে এখন ৩৫০ ও লেয়ার মুরগি ৩৭০টাকা। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০টাকা। বড়বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবুল হাশেম শুক্রবার জানান, পাইকারি বাজারে মুরগির দাম বেশি। বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বিধায় খুচরা দামও বেশি পড়ছে। তিনি আরও বলেন খামারিরা দাম না কমালে বাজার স্বাভাবিক হবে না।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি ভরপুর। তবুও ভরা মৌসুমে বাজারে সবজি ৫০ টাকার নিচে মিলছে না। এর বড় একটা কারণ খুচরা বিক্রেতারা আড়ত থেকে অর্ধেক দামে কিনে ক্রেতাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বড়বাজার এইচ এম এম রোডের আড়ত আরিফ ভান্ডারের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন লোকসমাজকে জানান, শুক্রবার তার আড়তে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি মূল্যে ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, অথচ খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৬০ টাকায়। বেগুন পাইকারি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২২/২৫ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৫০টাকা। বরবটি পাইকারি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৬০ টাকা। সজনেডাটা পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। পটল পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৩০ টাকা আর উচ্ছে পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৮০ টাকা।
অন্যদিকে বড়বাজার কাঠেরপুলে শুক্রবার মাংস বিক্রেতাদের ইচ্ছেমত দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। দেখা যায় কোনও বিক্রেতা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭০০ টাকা, কেউ বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি, আবার কেউ বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকায়।
শুক্রবার বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুর রহমান বলেন,‘ তিনি বড়বাজার ঘুরে দেখেছেন আলু, পেঁয়াজ, সবজি, মুরগি ও মাংসের কোনও ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বিক্রেতাদের কারসাজিতে বাজারে চড়াদামে নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতিতেই এমনটা হচ্ছে।